ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রশিক্ষণ ফায়ারিং রেঞ্জের গুলি পড়ছে বাড়িতে, আতঙ্কে বাসিন্দারা

মো. কবির হোসেন, রাজবাড়ী
🕐 ৭:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

প্রশিক্ষণ ফায়ারিং রেঞ্জের গুলি পড়ছে বাড়িতে, আতঙ্কে বাসিন্দারা

রাজবাড়ীর বিসিক শিল্পনগরীর পাশে ঘনবসতি এলাকায় হেলিপোর্ট নামক স্থানে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রাজবাড়ী জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কমান্ডেন্ট-এর তত্ত্বাবধানে এখানে চলে তাদের প্রশিক্ষণ। এমনকি জেলার বাইরের আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও ফায়ারিং প্রশিক্ষণ করেন এখানে। দীর্ঘদিন চলে আসা এ ফায়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি এখন এলাকাবাসীর জন্য মারাত্মক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ফায়ারিং রেঞ্জের আশে পাশে দিন দিন বেড়ে চলেছে জনবসতি।

বিশেষ করে খোলা আকাশের নিচে ও উন্মুক্ত স্থানে ফায়ারিং করায় গুলি গিয়ে পড়ছে বসবাসকারী মানুষের বাড়িতে। আর এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে প্রায় ৫০টি পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ারিং স্পটে বিকট আওয়াজ। আশেপাশের লোকজন যারা ফায়ারিং-এর মাঠ ব্যবহার করে বাড়িতে যান তাদের অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। এমন অনেক বাড়ির সদস্য রয়েছেন যাদের বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র পথ এ হেলিপোর্ট ফায়ারিং রেঞ্জের মাঠ।

ফায়ারিং স্পটের ডান পাশে রয়েছে জনবসতি। তাদের তেমন কোনো সমস্যা না হলেও যে দিকে লক্ষ্য করে ফায়ারিং করা হয় সেখান থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকের প্রায় ৫০টি পরিবার আতঙ্কে থাকেন, যখন ফায়ারিং শুরু হয়। তাদের অনেকের গায়ে বা ঘরের চালে গিয়ে পড়ে অধিকাংশ গুলিগুলো।

স্থানীয় বাসিন্দা আ. মালেক মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার টিনের ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে মেঝের মাটি ভেদ করে রয়েছে একটি গুলি। তিনি বলেন, প্রতিবার ফায়ারিং এর সময় আমাদের বাড়ির চালে, উঠানে এসে পড়ে পিতলের ভারী গুলি, এতে আমরা আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে বাড়িতে। তাদের সমস্যা আরও বেশি হয়। তারা অনেক সময় বাড়িতে আসা গুলিগুলো কুঁড়িয়ে আনতে যায় তখন, তাদের গায়ে লাগার আশঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে চাই। তাদেরকে অনেকবার বলেছি, তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় নাই।

স্থানীয় মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, যখন গুলি শুরু হয়, বৃষ্টির মতো গুলিগুলো আমাদের উঠানে এসে পড়ে। আমরা ঘরের বাইরে যেতে পারি না। যতক্ষণ গুলি চলে আমরা ঘরের মধ্যেই থাকি। বাইরে গিয়ে কোনো কাজকাম করতে পারি না।

অন্য আরেক ভুক্তভোগী হাফিজা বেগম বলেন, আমাদের গুলির শব্দে ঘরে থাকতে ভয় করে। ১০টা গুলির মধ্যে ৮টা গুলিই বাইরে চলে আসে। আমাদের মাথার ওপর দিয়ে যায়, উঠানে পড়ে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী বাসিন্দা খাইরুল বলেন, আমি ঘরে শুয়ে ছিলাম। আমার বাড়ির চালে এসে গুলিগুলো পড়েছে। এ দেখেন আমার হাতে ৬টা গুলি। এগুলোর একটা যদি আমার বা আমার মেয়ের গায়ে পড়ত তাহলে যদি কিছু হতো এর দায় কে নিত। আমরা এ ধরনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি চাই। আমরা তাদেরকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ কানেই নেয়নি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কমান্ডার মো. রাশেদুজ্জামান খোলা কাগজকে বলেন, আজকে মাদারীপুরের-২০ ব্যাটেলিয়ন-এর ২৬৯ জন ফায়ারিং এর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমরা ফায়ারিং-এর সকল নিয়ম-কানুন মেনেই মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করে আজকে প্রশিক্ষণ চালু করেছি। মাঠের চারপাশে আমারা লোক রেখেছি যেন কেউ ফায়ারিং রেঞ্জের কাছে না আসতে পারেন। স্থানীয় বাসীন্দারের বলেছি- কিছু সময় তারা যেন ঘরে থাকেন। তবে কারো গায়ে এসএমজি গুলি লাগলে কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ গুলিগুলো উপর থেকে গতি কমে নামে। হয়তো ভয়ে তারা এ অভিযোগ করছে।

তিনি আরও বলেন, অতি দ্রুত আমাদের এ ফায়ারিং মাঠ আরও অত্যাধুনিক করা হবে। উপরে ছাদ দিয়ে ঘেরাও করা হবে যেন কারো বাড়িতে গুলি না যায়। আমরাও চাই না কারো ক্ষতি হোক।

 
Electronic Paper