ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধা দেবদাস মন্ডল করোনায় আক্রান্ত
মাগুরা প্রতিনিধি
🕐 ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২১
৮ থেকে ১০ বার পরীক্ষা করেছেন বোঝার জন্য তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন কি না। প্রতিবারই এই পরীক্ষায় উত্তরে গেলেও এবার এসেছে পজেটিভ। আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। এবার আর ঘাতক এই ভাইরাসটি ছাড় দেননি তাকে।
মাগুরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দেবদাস মন্ডল অনেকটাই সুস্থ আছেন বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন তিনি নিজেই।
যিনি ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ছুটে বেড়িয়েছেন জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কখনো মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, কখনো বা জেলা সদর হাসপাতালে। আবার ফোন পেয়ে ছুটে গিয়েছেন অসুস্থ ব্যক্তির বাড়িতে। এভাবেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির স্যাম্পল নিয়েছেন। আর সেই স্যাম্পল থেকে পরীক্ষা নিয়ে কেউ আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। কেউবা পেয়েছেন নেগেটিভ হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। আবার এর ভিতর ঘাতক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। তবে থেমে থাকেননি দেবদাস মন্ডল।
এবার কিছুদিনের জন্য থামতে হলো তাকে। কেন না এবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি নিজেই। তবে আবারো সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে চান তার কর্মস্থলে। নিতে চান আরও অসুস্থ মানুষের স্যাম্পল নিয়ে কাজ করতে। আর এর জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য ২০০৮ সালে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের চাকরিতে আসেন দেবদাস মণ্ডল। তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার মৃগিডাঙা গ্রামে। দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন শহরের হাসপাতাল পাড়ায়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের ট্রেনিং নেন তিনি। এর পর গত বছর ৩ এপ্রিল মহম্মদপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা যান, তাকে দিয়েই নমুনা সংগ্রহ শুরু করে সে। এরপর ওই বছর ৬ জুলাই শহরের আদর্শপাড়ায় যে অন্তঃসত্ত্বা নারী মারা গেলেন, তার নমুনাও সংগ্রহ করে সে। এভাবে জেলায় আক্রান্তদের একটি বড় অংশের নমুনা সংগ্রহ করে দেবদাস মন্ডল।
দেবদাস মন্ডল বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে শরিরে কিছুটা ব্যাথা ও জ্বর অনুভব করি। রাতে নিজেই পরিক্ষা করি। তখন কিছুটা আক্রান্তের আভাস পাই। পরে শুক্রবার সকালে আমার সহকর্মীর মাধ্যমে পরিক্ষা করে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এই মুহূর্তে কিছুটা জ্বর আছে। এছাড়া রয়েছে গায়ে প্রচন্ড ব্যাথা। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে আমার স্যার (জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান) খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমার চিকিৎসার জন্য জেলার প্রায় সকর ডাক্তার খোঁজখবর নিচ্ছে এবং পরামর্শ দিচ্ছেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, দেবদাস ছেলেটি খুবই পরিশ্রমী ও সাহসী। সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো আছে। আমি নিজে তার চিকিৎসার ব্যাপারে দেখভাল করছি। আশা করছি সে খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে আবারও কাজে যোগ দেবে। এছাড়া তার অবর্তমানে তারই ট্রেনিং দেওয়া বেশ কয়েকজনকে দিয়ে আমরা স্যাম্পল কালেকশন এর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে মাগুরা -১ আসনের সংসদ সদস্যের পক্ষে তার খোঁজ খবর নিয়েছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও হটলাইন টিমের সমন্বয়ক ফজলুর রহমান। দেবদাস মন্ডলের বাড়িতে দেশি ফলমুল ও খাবার পৌছে দেন তিনি। এছাড়া তার চিকিৎসার প্রয়োজনে যা কিছু করার প্রয়োজন সে সকল ব্যবস্থাও করা হবে বলে তাকে সংসদের পক্ষে আশ্বস্ত করেন।