ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রূপগঞ্জে বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন, পাশে দাঁড়ালেন ছাত্রলীগ নেতা

মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
🕐 ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২১

রূপগঞ্জে বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন, পাশে দাঁড়ালেন ছাত্রলীগ নেতা

স্বামী বলাই মিয়া মারা গেছেন ৪৫ বছর আগে। জীবদ্দশায় মাত্র দেড় শতক জমিতে রেখে যায় একটি কুঁড়েঘর। আর সেই কুঁড়েঘরে বসবাস করে মানবেতর জীবনযাপন করেন বলাই মিয়ার স্ত্রী সামসুন্নেছা (৭৫)। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুরের দুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। নেই ভালো থাকায় ঘর। নেই পানির ব্যবস্থাও। আবার নেই তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা। এমন নানা সমস্যা ও অভাব নিয়ে এক শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়েসহ খুব কষ্টে দিন কাটান তিনি। তবে বিষয়টি নজরে আসলে ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে অভাব মোচনের চেষ্টা করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম খোকন।

কথা হয় দাউদপুর ইউনিয়নের দুয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা সামসুন্নেছার প্রতিবেশী গৃহিণী রেহানার সঙ্গে। তিনি জানান, সামসুন্নেছার বড় মেয়ে আজিদা শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তার বিয়ে হয় পাশের গ্রামে আগলায়। কিন্তু কোনো সন্তান হয়নি তার। আবার আজিদার স্বামী নুরু মিয়াও মারা যায়। আজিদার কোনো সন্তান না থাকায় স্বামীর বাড়িতে আশ্রয় মেলেনি। আর অন্য মেয়েদের বিয়ে দিলেও দারিদ্রতার কারণে মায়ের খোঁজ রাখতে পারেন না তারা। এতে সামসুন্নেছা আরও অসহায় হয়ে পড়েন। এরপর জীবন যুদ্ধ চালাতে গিয়ে গ্রামের আটদশ জনের সহায়তা নিতে বাধ্য হন।

পাশের লোকজন যে যার মতো সহযোগিতা করতেন তাই খেতেন। এতদিনে কুঁড়েঘরটিও ভেঙে যায়। টিনগুলো মরিচা পড়ে যায়। ব্যবহার্য পানি বলতে পাশের খাল একসময় ছিল অবলম্বন। সময়ের ব্যবধানে সেই খালের পানি নষ্ট হলে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসল করতে যেতে হতো তাকে।

দুয়ারার বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, গ্রামের সবাই যখন যার যার টিউবওয়েল ও নিজের পানি দিয়ে গোসল সাড়েন, আর ওই বৃদ্ধা ও তার মেয়ে আজিদা গোসলের জন্য ১ কিলোমিটার হেঁটে নদীতে যান। এ দৃশ্য হৃদয়বিদারক হলেও কারো সহযোগিতা পাননি তিনি। তবে তিনি সম্প্রতি খাবার পানি জোগার করতেন একই গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম খোকনের বাড়ি থেকে। আর তাই বৃদ্ধার অসহায়ত্বের বিষয়টা ছাত্রলীগ নেতা খোকনের নজরে আসে। তিনি ওই বৃদ্ধার যাবতীয় খরচাদির দায়ভার গ্রহণ করেন। পানির অভাব দূর করতে নিজের অর্থায়নে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে একটি সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে দেন বৃদ্ধার উঠানে। ওই উঠানের জমি বৃদ্ধার নয় দাবি করে পাশের বাড়ির লোকজন বাধা দিলে তাও সমাধান করে দেন তিনি।

এসব বিষয়ে কথা হলে বৃদ্ধা সামসুন্নেছা বলেন, “যেয় আমার পানির ব্যবস্থা করছে, আল্লাহয় তার আত্মা ঠান্ডা করব।" এ সময় তিনি আরও বলেন, 'সরকার আমারে বয়স্ক ভাতা যা দেয় তা দিয়ে জীবন চলে না। হুনতেছি কত মাইনসেরে সরকারি ঘর দিছে, আমারে কী চোখে পড়ে না? ইদানিং আমগো খোকন নেতায় কইছে, আমারে ঘরের ব্যবস্থাও কইরা দিব।'

এসব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম খোকন বলেন, দুয়ারা গ্রামের সামসুন্নেছা ছাড়াও আশপাশের দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী লোকদের পাশে আমার সাধ্যমতো দাঁড়িয়েছি। সম্প্রতি করোনা মহামারীর লকডাউন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের ৩ শতাধিক মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। গতবছরও ছিলাম। এভাবে সকল নেতাকর্মীরা যদি যার যার পাশের অসহায় মানুষের খেয়াল রাখে তবেই সবাই মিলে হাসি খুশি থাকা সম্ভব।

এ বিষয়ে দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গির মাষ্টার বলেন, ছাত্রলীগ নেতা খোকন ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছে এমন খবরে আমরা খুব খুশি হয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও ওই বৃদ্ধার জন্য আরও সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব।

 
Electronic Paper