ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
সিরাজদিখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি ৭:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৭, ২০২১

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নে নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি কাটার মহোৎসবে মেতেছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। মাটিকাটা বন্ধে প্রশাসনের জোর তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সিন্ডিকেটের লোকজন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেই নিয়মিত মাটি কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের ইমামগঞ্জ গ্রামীণ ব্যাংকের দক্ষিণে সিরাজদিখান-নিমতলা সড়কের পশ্চিম পার্শ্বের বেশ কয়েকটি ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
৭-৯ পর্যন্ত গভীর ও ছোট পরিসরের একটি ফুটবল মাঠের মতো জায়গাজুড়ে মাটি কাটার কারণে ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে পার্শ্ববর্তী জমিগুলো। প্রায় দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে অবৈধ পন্থায় রাত-দিন ওই জায়গা থেকে ভেকু বসিয়ে মাটি কাটছেন সানি হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বাসাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার ভাতিজা। বেশ কয়েক মাস পূর্বে ওই জায়গাটি থেকে মসজিদের নাম করে মাটি কাটা শুরু করেন সানি হাওলাদার। প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতের বেলা মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
অভিযোগ সম্পর্কে সানি হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ কাজ আমার না, এটা একজন সাংবাদিক পরিচালনা করে। আপনি সেই সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ জমিটি ওই সাংবাদিকের আত্মীয় জেলা পরিষদের সদস্য আলী আহম্মেদ বাচ্চুর। তিনি পুকুর করার জন্য এসিল্যান্ডের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মেদ বাচ্চুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জমিটা দাদার আমল থেকেই পুকুর ছিল। আমি পাড় কাটার আগে মৌখিক অনুমতি নিয়েছি ইউএনও ও এসিল্যান্ডের কাছ থেকে।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়জুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় জমির মালিকরা তাদের জমির মাটি কেটে বিক্রি করে ফেলে। ফসলি জমির মাটি কাটা অবৈধ। আমরা বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি এবং কৃষকরা যাতে জমির মাটি না কাটে সেই জন্য জনসচেতনতামূলক আলোচনা তাদের সঙ্গে করে থাকি।
স্থানীয়রা জানায়, বাসাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। এখনো চলেছে মাটি কাটার এ মহোৎসব। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে ওই এলাকার কৃষিপণ্য উৎপাদনসহ কৃষি জমির সংখ্যা। স্থানীয়দের অভিযোগ অনেকটা জোর জুলুম করেই কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ভাঙন হুমকির মুখে পড়ছে গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া জমিগুলোর পার্শ্ববর্তী জমিগুলো।