ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নকলায় হত্যা মামলাকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার পায়তারা

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
🕐 ৪:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৬, ২০২১

নকলায় হত্যা মামলাকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার পায়তারা

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় দরিদ্র বর্গাচাষীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলার বাদীকে হত্যার হুমকিসহ স্বাক্ষীদের বিভিন্ন ভাবে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ মর্মে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মামলার বাদী শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের নিহত বর্গাচাষী আজিম উদ্দিন ওরফে আজি মিয়ার ছেলে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন দরিদ্র বর্গাচাষী পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান এবং শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যবসায়ী শাখার ছাত্র।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সহজ সরল মোশারফের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ছাগলে সুপারিগাছ খাওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার বাউসা গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির ইউসুফ ওরফে লিখন, সজীব ও মজিবর গংরা মোশারফের বাবা আজিম উদ্দিনকে দিবালোকে জনসম্মূখে পিটিয়ে হত্যা করে।

পরে নিহত আজিম উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ইউসুফ ওরফে লিখন, সজীব ও মজিবরসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দিনই নকলা থানার পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করে শেরপুর আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে প্রেরন করেন। এর পরের দিন থেকেই আসামি পক্ষের লোকজন মামলার বাদী মোশারফকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছে। তাছাড়া হত্যা মামলার স্বাক্ষীদেরকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানোসহ নানান ভাবে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি সত্য স্বাক্ষী নাদিতে স্বাক্ষীদের বিভিন্ন ভাবে নিয়মিত চাপ প্রয়োগ করে আসছে আসামী পক্ষের লোকজন। এমন অন্যায় ও মানবাধিকরা লঙ্গনের মতো ঘটনায় চাপ প্রয়োগকারীদের মধ্যে ২/৩ জন স্বঘোষিত কথিত সাংবাদিকের নামও প্রকাশ করেন বাদী মোশারফ ও হত্যা মামলার ২ নং স্বাক্ষী এনামুল হক।

বাদীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়- হত্যা মামলাটি তুলেনিতে বাদীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং সত্য স্বাক্ষী না দিতে স্বাক্ষীদেরকে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। এর আলামত হিসেবে শেরপুর সদর এলাকায় আসামীদের একটি ট্রাকটর পাওয়া যায়। ট্রাকটরটি সেখানে যাওয়ার বিষয়ে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলা হয়। ট্রাকটরটি নাকি ১ নং স্বাক্ষীর নিকট ক্রয় করা হয়েছে। ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি নামা কার্টিজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ১ নং স্বাক্ষীর স্বাক্ষর পরীক্ষায় ও সুষ্ঠু তদন্তে বেড়িয়ে আসে যে, ঘটনাটি বাদী ও স্বাক্ষীদের হয়রানি করতে ও হত্যা মামলাটিকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করতে সাজানো হয়েছে। যার বাড়িতে ট্রাকটরটি পাওয়া গেছে তাকে অভিযুক্ত করে সুষ্ঠু তদন্ত ও মামলার স্বার্থে একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

বাদী ও স্বাক্ষীগনের বিরোদ্ধে আসামীদের বাড়িতে লুটতরাজের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাছাড়া আসামিদের বোরো আবাদে সেচ বন্ধ করার অভিযোগ আনা হচ্ছে বাদীর ওপরে।

এ বিষয়ে বাদী ও ২ নং স্বাক্ষী এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন স্বাক্ষী বলেন, দিবালোকে জনসম্মূখে পিটিয়ে হত্যা করার পরেই আসামিরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল একই গ্রামের মোফাজ্জল ওরফে চুহু মিয়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল, সোবহান ও সাহাবাজের বাড়িতে রেখে, তাদের নিজ নিজ ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ অন্যের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক বানেশ্বরদী ইউপির চেয়ারম্যানকে বলে আসামীদের ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে আসামিদের ঘরের মালামাল মোফাজ্জল ওরফে চুহু মিয়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল, সোবহান ও সাহাবাজের বাড়িতে রাখা আছে বলে এলাকাবসীদের অনেক জানান।

অন্যদিকে বাদীর কোন আবাদী জমি নেই, নেই কোন সেচপাম্প; আসামীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বোরো আবাদে পানি দেওয়া হচ্ছে না। অথচ উল্টা বাদী ও স্বাক্ষীদের ভয় দেখাতে তার বিরুদ্ধে বোরো আবাদে সেচ বন্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা শুনার পরে নকলা থানার ওসি সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য নিয়ে আসামীদের বোরো আবাদে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

চাক্ষুস প্রমাণিত হত্যা মামলাকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করতে মিথ্যা খবর প্রকাশ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টির পায়তারা করাসহ মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন নিহত আজিম উদ্দিনের ছেলে মামলার বাদী মোশারফ হোসেন। লিখিত ওই অভিযোগে দিবালোকে জনসম্মূখে পিটিয়ে হত্যা করার বিষয়টিকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই রহস্যজনক মৃত্যু বলাসহ বিভিন্ন ভাবে অপকৌশলের বিরুদ্ধে তথা মিথ্যা খবরের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। তাছাড়া নিরিহ বর্গাচাষী আজিম উদ্দিন ওরফে আজি মিয়াকে হত্যা করার মামলাটিকে যেন কোন অপশক্তি ভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে না পারে, এর জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ উপযুক্ত বিচার চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া লিখিত এ অভিযোগের শেষ দিকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়- আমিসহ আমরা নিরিহ ও দরিদ্র পরিবারের মানুষ। মহান সৃষ্টিকর্তা ও সত্যবাদী মানুষরাই আমাদের সহায়ক। তাই সাংবাদিকদের সত্য ও বস্তু নিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ও সত্য ঘটনা বেড়িয়ে আসবে বলে হত্যা মামলার বাদী, স্বাক্ষী ও এলাকাবসীর বিশ্বাস।

এ বিষয়ে নকলা থানার ওসি মুশফিকুর রহমান জানান, হত্যা মামলার পরে এপর্যন্ত বাদী বা বিবাদীর কোন পক্ষেই অন্যকোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কোন প্রকার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। আর হত্যা মামলার ২জন কারাগারে আছেন, বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে ওসি মুশফিকুর রহমান জানান।

 
Electronic Paper