মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভা নির্বাচন
নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি আ.লীগ সমর্থিত ৫ জন, বিএনপির একক প্রার্থী
নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
🕐 ৪:২৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০
আগামী ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারন কাউন্সিলরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। দিচ্ছেন ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি। আর ভোটারও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করছেন। তফসিল ঘোষনার পর থেকেই প্রার্থীরা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এ নির্বাচনে ৩০ হাজার ৪১৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ৩৬৭ জন ও মহিলা ভোটার হচ্ছে ১৫ হাজার ৫১ জন।
রাজৈর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম হারুন উর রশীদ মোল্লার ছোট মেয়ে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক ও প্রভাষক নাজমা রশীদ। আর নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র শামীম নেওয়াজ, সাবেক ছাত্র নেতা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজৈর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বক্কার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেব মিয়ার মেয়ে ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক গোপা শারমিন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিতা কুদ্দুস এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুল হক (নাদির)।
অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একক প্রার্থী হিসাবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন। নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মাঠে থাকায় বিএনপির একক প্রার্থী হিসাবে সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মাদারীপুরের সর্বত্র এখন কে হচ্ছেন পৌর পিতা বা মাতা। তবে জয়ের ব্যাপারে প্রত্যেকেই আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে জোড় প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন নাজমা রশীদ। তিনি খোলা কাগজ প্রতিবেদককে জানান, এটা হল স্থানীয় নির্বাচন এবং পৌর নির্বাচনে এই প্রথম দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি থাকতেই পারে, আমি এতে বিচলিত নই। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। দল আমার পক্ষে কাজ করছে। জনগণ ইনসাল্লাহ আমাকেই বিজয়ী করবে।
নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক শামীম নেওয়াজ। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমি বিপুল ভোট পেয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। প্রায় ৬ বছর জনগণের সেবা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি। জনগণই আমাকে পুনরায় নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। জনগণ আমার সাথে আছে। আমি বিজয়ী হব ইনসাল্লাহ।
নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে চামচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন এক সময়ের তুখোড় সাবেক ছাত্র নেতা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বক্কার।
তিনি জানান, ২৬ বছর রাজনীতি করছি, দল থেকে তেমন কিছু পায়নি। নৌকার প্রার্থী থেকে আমার রাজনৈতিক অর্জন অনেক বেশী। সুখে দুখে সব সময় দলের সাথে থেকেছি। আজ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় আমার কর্মী, সমর্থক ও জনগণের চাপে প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছি। জনগণের ভোট এবং দোয়ায় আমি জয়ী হব।
রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব মিয়া জানান, একই দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।
অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই আওয়ামী লীগের। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলে সম্মানিত ভোটাররা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে বলে আমি আশাবাদী।
রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে ইভিএম মেশিন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৌছেছে। নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট গ্রহনের মক ভোট প্রদর্শনী করা হবে।
তিনি আরো জানান, রাজৈর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯ জন এবং সাধারন কাউন্সিলর পদে ৩২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ভাবে চলছে। এবারই প্রথম ইভিএমএ ভোট গ্রহন হবে। আশাকরি সুষ্ঠভাবে ভোট গ্রহন করা সম্ভব হবে।