ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভঙ্গুরদশায় চারিতালুক পালবাড়ি

মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
🕐 ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২০

ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে বিভিন্ন বইপুস্তকে দর্শনীয় স্থানের তালিকায় থাকা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চারিতালুকের পালবাড়ি বেহাল দশায় পড়ে আছে। অরক্ষিত ভবনটির অনেকাংশ হয়েছে বেদখল। ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন হওয়ায় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নজর এড়িয়ে উপজেলা ভূমি অফিসকে বিনিময় দলিল দেখিয়ে নেওয়া হয়েছে মালিকানার বৈধতা। ব্রিটিশ আমলের এ প্রাচীন স্থাপনায় এখন যারা বসবাস করছেন, তাদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পলাশী ও মুর্শিদাবাদের ইতিহাস। অনেকে বলছেন, পলাশী যুদ্ধে চক্রান্তকারী বিশ^াস ঘাতক মীর জাফরের উত্তরসূরি তারা। যদিও বসবাসকারী বাসিন্দারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা নবাব আলীবর্দী খাঁ কিংবা মুর্শিদাবাদের জালালপুর গ্রামে বসবাসের কথা, এমনকি নবাব পরিবারের সঙ্গে তাদের পূর্বপুরুষদের যোগাযোগের কথা স্বীকার করলেও মীর জাফরের উত্তরসূরি হিসেবে মানতে চাননি।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের অধীনে মোচার তালুক মৌজার চারিতালুক গ্রামে রয়েছে একটি প্রাচীন দালান। যা মৌজাটির আরএস ৮৮৯নং খতিয়ানের ৩১ শতক জমি থেকে কেবল ৬ শতক জমির ওপর দ্বিতল ভবনে পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন নিয়ে কালের বিবর্তে জরাজীর্ণ আর অরক্ষিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় ভূমি অফিস ও প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে অভিজাত জমিদারদের আবাসস্থল ছিল। যেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন শাসক পাল রাজাদের বংশধর ও জোতদাররা বসবাস করতেন। কথিত আছে, ওই খান বংশের পূর্বপুরুষ হলেন মীর জাফর। সূত্র জানায়, এদের কিছু অংশ ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাবো এলাকায় চলে আসেন অস্থায়ীভাবে।

পালবাড়িতে বসবাসরত ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ হাজী আমানুল্লাহ আমান জানান, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তার বাবা আহসান উল্লাহ খান মাস্টার প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি বলেন, সে সময় আমরা মুর্শিদাবাদের জালালপুর গ্রামে বসবাস করতাম।

পাশাপাশি বর্তমান পুরান ঢাকায় আমাদের ব্যবসা ছিল। সে সময় আমাদের পিতা ভোলাবো এলাকার পালবাড়ির কথা ও এখানকার জোতদারদের কথা জানতে পারেন। ১৯৬৭ সালে আমরা তিন ভাই হাজী আমানুল্লাহ, খাইরুল আলম ও গোলাম কিবয়িরা তোতাসহ জালালপুর গ্রামের বেশ কিছু পরিবার এ অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করি।

বাড়িতে বসবাসের বৈধতার বিষয়ে তিনি বলেন, মোচার তালুক মৌজার আরএস রেকর্ড অনুযায়ী মালিক নরেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে অজিত কুমার পাল, প্রদীপ কুমার পাল ও সুধীর চন্দ্র পালদের কাছ থেকে আমরা তিন ভাই ১৯৭৩ সালের ২৬ নভেম্বর ২৮৩৩৭নং বিনিময় দলিল মূলে ২২১ বিঘা জমি পাই।

ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু বলেন, নিঃসন্দেহে এ পালবাড়িটির মাধ্যমে ভোলাবোর পরিচয় ফুটে ওঠে। রূপগঞ্জ উপজেলাকে যেমন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির মাধ্যমে চেনা যায় তেমনি ভোলাবো ইউনিয়নের এ স্থাপনা গুরুত্ব বহন করে। তবে যারা বসবাস করছে তারা বিনিময় দলিলের মাধ্যমে মালিকানা পেয়েছেন। ফলে তাদের বৈধতা রয়েছে।

ভোলাবো ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (সহকারী নায়েব) সঞ্জয় কুমার ভাওয়াল বলেন, এটা আরএস রেকর্ডীয় সূত্রে ব্যক্তিগত মালিকানার জমিতে অবস্থিত। যারা বসবাস করছেন তারা বিনিময় দলিলের মাধ্যমে বৈধভাবে মালিক হয়ে বসবাস করছেন বলে জানি। ফলে তা সরকারিভাবে সংরক্ষণের উপায় নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফা খান বলেন, চারিতালুকের পালবাড়িটির বিষয়ে জেনেছি। ঊর্ধ্বতন মহল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়ে সংরক্ষণে শিগগিরই প্রতœতত্ত্ব বিভাগকে চিঠি পাঠানো হবে।

 
Electronic Paper