ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মধুনী পাথর বিলে পাখিহত্যা ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা

তানজেরুল ইসলাম, গাজীপুর
🕐 ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০২০

যতদূর চোখ যায় দেখা মেলে বাহারি রঙের বিভিন্ন প্রজাতির ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। দিনভর শোনা যায় কিচিরমিচির সুরের মূর্ছনা। এই দলে আছে বিপন্ন পাখিরাও। স্বজন ও রাজৈ গাঁওয়ের নির্জনতা ভেঙে দেয় তারা। এ যেন তাদের নিজস্ব এক জগৎ। অথচ মধুনী পাথর বিলের টলমল জলই তাদের জন্য ডেকে এনেছে বিপত্তি। প্রকৃতি উপভোগের নামে হত্যা করা হচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। বছর জুড়ে চলছে পাখিহত্যার মহোৎসব। দিন দিন এই মহোৎসবে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন পাখি শিকারী।

তোয়াক্কা করছেন না আইনের। আর ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না এলাকাবাসী। তবে গ্রাম দুটির ঐতিহ্য রক্ষায় বিলটিকে পাখির অভয়াশ্রম করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় মধুনী পাথর বিল। বহু বছর ধরেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শীত মৌসুমে এই বিলে আশ্রয় নেয় বালি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, রাঙ্গামুরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। এ ছাড়া বিলটিতে বছরব্যাপী থাকে পানকৌড়ি, মাছরাঙ্গা, কালিম, ডাহুক, সাদা খঞ্জন, বকসহ দেশীয় পাখি।

স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, বিলটি এখন পাখিদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। মানুষের বিলাসী এয়ারগানের গুলিতে প্রাণ দিতে হচ্ছে তাদের। প্রতিবছর শীতকালে ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকা থেকে ধনাঢ্য পরিবারের কিছু মানুষ নিয়মিত এয়ারগান হাতে পাখি শিকারে আসেন। অধিকাংশ সময় তাদের সঙ্গে সুঠামদেহীর দেহরক্ষীও থাকে। দিনভর পাখি শিকার করে গাড়ি ভর্তি করে তারা নিয়ে যায়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

গাজীপুর শ্রীপুর বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের মুখপাত্র রাহাত আকন্দ জানান, বিগত দিনে পাখি শিকার বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া বিল সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ফেস্টুন সাঁটিয়েছিলেন। তবে ফেস্টুনগুলো পাখি শিকারিরা তুলে ফেলেছে।

বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা জানান, দেশীয় প্রজাতির পাখি ধরা, মারা, পোষা দণ্ডনীয় অপরাধ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২এর ৩৮ (১) ধারা অনুযায়ী, পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

একই অপরাধ পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রাফি, অসম্পূর্ণ ট্রাফি, মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ, দখলে রাখলে, ক্রয়, বিক্রয় বা পরিবহন করা দ-নীয় অপরাধ।

জানা গেছে, ওই বিলে এ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই পাখি শিকার রোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে ভয়ে কেউ প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ করেনি।

এ ব্যাপারে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল হাসান জানান, ‘এলাকাবাসী লিখিত আবেদন করলে সেখানে পাখির অভয় আশ্রম তৈরি করার পরিকল্পনা করা হবে। আসছে শীত মৌসুমে তিনি মধুনী পাথর বিলে পাখি দেখতে যাবেন বলেও জানান।’

 
Electronic Paper