ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টুঙ্গিপাড়া এখন বাঙালি জাতির পুণ্যভূমি

শেখ মোস্তফা জামান, গোপালগঞ্জ
🕐 ৩:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২০

টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি এখন বাঙালি জাতির পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই অগণিত ভক্তের আগমন ঘটছে এখানে। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। কেউ কেউ আবার ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্ম জীবনে সাফল্য, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত এসব মানুষের মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই নয়, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক/শিক্ষিকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এ ছাড়া নানা উপলক্ষ্য ও বিভিন্ন দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনী প্রধান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখানে সমাগত হন এবং বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

৩৮ একর ৩৩ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে নির্মিত জাদুঘর, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ছাড়াও এমপি থিয়েটার, মসজিদ, ক্যান্টিন, পুকুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন আগতরা। এরই সুবাদে এলাকার সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষা-দীক্ষাসহ আচার-আচরণের পরিবর্তন এসেছে এই এলাকার মানুষের। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার ভ্যান, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা চালক ও মালিক। বেকারত্ব ঘুচেছে অনেক যুবকের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার পর শুধু সমাধি সৌধ নয় উপজেলার সব জায়গায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনে টুঙ্গিপাড়া একটি উপভোগী উপশহরে পরিণত হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া এখন পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে।

এক সময়ে টুঙ্গিপাড়া ছিল গোপালগঞ্জ মহকুমার সদর থানাধীন পাটগাতী ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি অজোপাড়া গাঁয়। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অতি নাজুক। রাস্তাঘাট বলতে তেমন কিছুই ছিল না। টুঙ্গিপাড়া থেকে পাটগাতী বাজার বন্দর পর্যন্ত ছিল কাঁচা রাস্তা ও ৮/৯টি নড়বড়ে কাঠের পুল। হাট-বাজারে যাতায়াতে শীতকালে পায়ে হেঁটে ও বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাচল করা যেত না।

গোপালগঞ্জ সদর থেকে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। কোর্ট-কাচারি অথবা অন্য কোনো কাজে মহকুমায় যেতে হলে পায়ে হেঁটে অথবা নৌকায় ছাড়া যাওয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। মাত্র দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার পথ যাওয়া-আসায় প্রায় ৮/১০ ঘণ্টা লেগে যেত। বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে হাতুড়ে ডাক্তার অথবা কবিরাজ ছিল এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। স্বাধীনতার পরে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ সাহেরা খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। জীবনযাপনের মাত্রা ছিল অতি নিম্ন মানের।

হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ ছিল অভাবী। অর্ধহারে-অনাহারে জীবনযাপন করতেন তারা। তখনকার সময় পাকা ঘর-বাড়ি চোখেই পড়ত না। বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি ছিল ছন ও গোলপাতার। একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষেরই ছিল পাকা বাড়ি। কালের বিবর্তনে এখানে বঙ্গবন্ধু সমাধি হওয়ায় টুঙ্গিপাড়া এখন আকর্ষণীয় উপ-শহরে পরিণত হয়েছে।

 
Electronic Paper