ইউসুফের পাশে ছিলেন না বন বিভাগের কেউ
তানজেরুল ইসলাম ও মো. নেজাম উদ্দিন
🕐 ২:৫৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২০
গেল ৩০ জুলাই দুপুরে ফরেস্টার ইউসুফ উদ্দিনের ওপর হামলা চালায় ভূমিদস্যুরা। হামলার পর মুমূর্ষু ইউসুফকে প্রথমে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় বন বিভাগের অচেনা তিনজন অচেতন ইউসুফকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা হয়ে যান।
ইউসুফের বন্ধু ইশতিয়াক জানান, ইউসুফকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর বন বিভাগের তিনজন হাসপাতালে থেকে সটকে পড়েন। এ সময় ইউসুফের আর এক বন্ধু শওকত হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ইউসুফকে সিটি স্ক্যান করানোর জন্য পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান ইশতিয়াক ও শওকত। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইউসুফকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ৯টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা দেন দুই বন্ধু। পথিমধ্যে ইউসুফের পিতা নিজামুদ্দিন এবং বড় ভাই মিনহাজ অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন। তবে এ সময় বন বিভাগের কেউ অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন না। এমনকি কেউ মোবাইল ফোনে ইউসুফের খবর নেননি।
ইউসুফের পিতা নিজামুদ্দিন জানান, ৩০ জুলাই দিবাগত রাত ২টায় অচেতন ইউসুফকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অথচ এর পরের সারাদিন বন বিভাগের কেউই হাসপাতালে তার ছেলের খোঁজ নিতে আসেননি। তবে ৩১ জুলাই রাত ১১টার দিকে মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী হাসপাতালে ইউসুফকে দেখতে আসেন। ইউসুফের চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও বন বিভাগের কেউই একটি টাকা দিয়েও সহযোগিতা করেনি। অথচ সর্বশেষ গেল ২৯ জুলাই তিনি মোবাইল ফোনে ইউসুফের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঈদে কনিষ্ঠ পুত্রকে তিনি বাড়ি আসতে বলেন। তবে ইউসুফ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে বাড়ি যেতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তার বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব মাত্র এক ঘণ্টার পথ। অথচ রেঞ্জ কর্মকর্তা হাসপাতালে আসতে সময় নিলেন ২১ ঘণ্টা। ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ইউসুফের অপারেশন করা হয়। ইউসুফের মৃত্যু হয় ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টায়। অত্যন্ত নির্মম এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে ইউসুফকে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ইউসুফের মাথাসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৬ আগস্ট রাতে কুতুবদিয়ায় নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে ইউসুফের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ জানাজায় অংশ নিতে যাননি বিভাগের কেউ। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অথচ তার মরা মুখখানিও বন বিভাগের কেউ দেখতে আসেননি। এমনকি মৃত্যুর পর হাসপাতালেও কেউ আসেননি।
নিহত ইউসুফ উদ্দিনের বড়ভাই মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইউসুফ নিহত হওয়ার পর মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী ও বিট কর্মকর্তা আহসানুল কবির জানাজার নামাজে পর্যন্ত আসেননি।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, আমার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য সুলতানুল আলম চৌধুরী সরকারি বিধিবহির্ভূত টহল দল গঠন করেছিলেন। সুলতানুল আলম চৌধুরী সব সময় ইউসুফের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতেন।