পাঁচশ টাকায় ওয়েল্ডিং মেশিন
হুমায়ুন কবির, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ
🕐 ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৬, ২০২০
ওয়েল্ডিং মেশিন উৎপাদনে খরচ পড়বে মাত্র ৫০০ টাকা। যেখানে একটি ওয়েল্ডিং মেশিনের বাজার মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, অধিক নিরাপদ, সহজে উৎপাদন ও বহন করা যায়- এমন একটি স্বল্প খরচের ওয়েল্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মোঃ লালন মিয়া (২৭)।
সরকারি বা কোন বেসরকারি সহায়তা পেলে খুব শিগগিরই বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে এই ওয়েল্ডিং মেশিন। এতে যারা ওয়ার্কশপের কাজ শিখে পুঁজির অভাবে দোকান নিতে পারছেন না তাদের উপকার হবে।
সুখিয়া ইউনিয়নের সুখিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া লালন মিয়া ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় মত্ত থাকতেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান লালন মিয়া উপজেলার বাহরাম খান পাড়া জে, কে আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর জীবিকার সন্ধানে ২০০৭ সালে রাজধানীর একটি ওয়ার্কশপে চাকরি নেন। ২০১২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে কিছু পুঁজি করে ২০১৭ সালে নিজ এলাকার সুখিয়া বাজারে ইকরা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামের একটি দোকান দেন। ঐ সময়ে ওয়েল্ডিং মেশিন কিনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়, তখন থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কারে উদ্যোগী হন তিনি।
স্বল্প খরচে ওয়েল্ডিং মেশিন উদ্ভাবনে নেমে পড়েন। সফল হওয়ার পর ওয়েল্ডিং মেশিনের নাম দেন ‘ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিন’। লালন মিয়া জানান, তার আবিষ্কৃত এই ওয়েল্ডিং মেশিনে বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে প্লাস্টিকের ড্রাম, পুকুর বা নদীর পানি, পরিমাণ মতো দুটি লোহার পাত ও ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ওয়েল্ডিং মেশিনটি উদ্ভাবন করেছেন। মেশিনটি তৈরিতে খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। প্রথম ধাপে মেশিনটি কলের পানি দিয়ে চালাতে গিয়ে অকৃতকার্য হলেও হাল ছাড়েন নি। আরো চিন্তাভাবনা করে নদীর পানি ও লবণ দিয়ে ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিনটি চালাতে সক্ষম হন।
লালন মিয়া জানান, তার এই উদ্ভাবনকে তিনি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চান। কম খরচে মেশিনটি আবিষ্কার করলেও কোন ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা এবং অনুমতিপত্র না থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, তাহলেই তার এই উদ্ভাবন হয়তো দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
উপজেলা শ্রমিকলীগের সদ্য সাবেক আহবায়ক শামীম আহমেদ জানান, লালন মিয়া কিছুদিন আগে সুখিয়া বাজারে নিজ দোকানে এই ওয়েল্ডিং মেশিনটি বসিয়েছেন এবং কাজ করছেন। যদি সরকারিভাবে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারজাত করা হয় তাহলে বাংলাদেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা যাবে।
স্থানীয় বাজারের ইলেক্ট্রিশিয়ান নয়ন মিয়া বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরণের ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করছি, এই ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিন একটি অসাধারণ যন্ত্র। যদি কোন প্রকৌশল ধারা মান নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে আনা যায় তাহলে স্বল্প পুঁজির ব্যাবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবেন।