ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কৃষিযোদ্ধা কিশোরগঞ্জের তারা ভাই

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
🕐 ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৪, ২০২০

বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার, সুরকার ও নিয়মিত শিল্পী সৈয়দ নূরুল আউয়াল তারা মিঞা। যেখানে কৃষি অনুষ্ঠান, সেখানেই তারা মিঞা। চিন্তা চেতনায় তিনি একজন স্বভাব কবি। কৃষি প্রযুক্তি প্রচারে ও উদ্বুদ্ধকরণে বিপ্লব ঘটানোর অগ্র সৈনিক এবং কৃষি গানের জাদুকর।

পরিচিতি লাভ করেছেন কৃষি, পরিবেশ, মৎস্য, পশু পালন, জনস্বাস্থ্য, বার্ড ফ্লু, এইডস, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, আর্সেনিক, স্যানিটেশন, মাদকবিরোধী, গণশিক্ষা ইত্যাদি বিষয় ভিত্তিক গান গাওয়া ও লেখায়। এসব বিষয়ে লিখেছেন তিন হাজারের অধিক গান, জারি, ছড়া, কবিতা। একটা সময় ছিল যখন কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর মময়মনসিংহের যেকোনো সরকারি অনুষ্ঠান মানেই ‘তারা ভাই’ এর গান। তারা মিয়ার উপস্থিতি টের পেলে উপস্থিত দর্শক শ্রোতা অন্য শিল্পীর গান শুনতে চাইতো না। যিনি কৃষি ভিত্তিক গান গেয়ে গণমানুষকে জাগিয়ে তুলছেন ৪০ বছর ধরে।

গণমানুষকে কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ধুুদ্ধ করার অসামান্য অবদান রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তারা মিঞাকে চারবার কৃষি উন্নয়নে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ ও ‘বঙ্গবন্ধু পদকে’ ভূষিত করেছে। তাৎক্ষণিক গান রচনা ও সুরারোপ করে নিজেই মঞ্চে উঠে অগণিত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম। কৃষির প্রযুক্তিকে সহজ সরল ভাষায় গান, কবিতা, ছড়ায় রূপান্তর করে রচনা করায় তার গান মন্ত্র মুগ্ধের মত শ্রবণ করে সর্বস্তরের কৃষক কৃষাণীগণ। ৩টি গানের বই, ২টি কবিতার বই এবং যৌথভাবে ৩টি গানের বই প্রকাশ করেছেন।

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গেয়েছেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই, মানুষের বাঁচার জন্য খাদ্যের জোগান চাই।’ রাসায়নিক সার ব্যবহার, বেশি ব্যবহারের ফলে জমির ঊর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়, তাই তিনি গেয়েছেন- ‘সারের রাজা জৈব সার- গোবর কম্পোস্ট সবুজ সার, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে করলে ব্যবহার’। অধিক ফসলের জন্য হাইব্রিড ধানের আবাদ আমাদের জরুরি, তাই তিনি গেয়েছেন, ‘আদরের বুবুজান, শুন তারা মিঞার গান, ধানের মাঝে হাইব্রিডের ফলন খুব ভালা ...।’

কৃষি বিভাগের চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৫৯ সালের ২ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে (মাতুলালয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামের বাড়ী সদর উপজেলা বৌলাই তেরহাসিয়া (ঐতিহাসিক পীর সাহেব বাড়ী)। তার পিতা মরহুম সৈয়দ আকবর আলী (রঃ), মাতা মরহুমা মালেকা খাতুন। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল এলাকায় বাড়িতে স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

তারা মিয়ার ছেলে অভিনয় শিল্পী সৈয়দ ইয়াছিন বলেন, একটু বৃষ্টিতেই আমাদের ঘরে পানি প্রবেশ করে। দারিদ্র চেপে ধরেছে। এর থেকে উত্তরণ খুব দরকার। বাবা এদেশের কৃষিকে অনেক দিয়েছেন। এখন রাষ্ট্রের উচিত এই গুণী ব্যক্তির সঠিক যতœ নেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাবা একটি আবেদন করেছিলেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ দৃষ্টি কামনা করছি।

তারা মিঞা বলেন, আমি আত্মপ্রচারনায় বিশ্বাসী নই। রাষ্ট্র ৪ বার আমার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করেছেন এর বাইরে আমার কি চাইবার আছে। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি আমার লেখায় উপকৃত হয় তাহলেই আমি খুশি।

ভক্তদের আকুলতা, শিল্পী তারা মিঞা সুস্থ, সুন্দর জীবন ফিরে পান। আবারো তার দরাজ কণ্ঠে কেঁপে উঠুক মঞ্চ, করতালিতে মুখরিত হোক কিশোরগঞ্জের সংগীতাঙ্গন।

 
Electronic Paper