কিশোরগঞ্জে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল বেকারী পণ্য
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
🕐 ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২০
কিশোরগঞ্জ জেলার শতাধিক অবৈধ বেকারিতে তৈরি হচ্ছে ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর পণ্য। কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসহ জেলার সব হাট-বাজারে, পথে-ঘাটে অবাধে বেকারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই পৌরসভাসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসব বেকারি অস্বাস্থ্যকর ও মানহীন পণ্য তৈরি করে দেদারছে করছে বাজারজাত। নানা কৌশলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে তারা মোড়ক তৈরি ও প্যাকেট করে বিক্রি করছে।
জানা যায়, জনসাধারণের বিস্কুট ও কেকসহ নানা ধরনের বেকারি পণ্যের চাহিদা পূরণের কথাকে পুঁজি করে এসব বেকারি সরকারি অনুমতি ছাড়াই মানহীন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার বড়-বড় সুপার স্টোরসহ মুদি ও স্টেশনারি মালের দোকানদাররা দেখতে চকচকা এবং দামে সস্তা মানহীন এসব পণ্য বিক্রি করছে। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করলেও বেকারিতে তৈরি এসব পণ্য আওতামুক্ত থাকছে।
সরেজমিনে কয়েকটি বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, স্যাঁতস্যাঁতে, নোংরা, ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারির এসব পণ্যসামগ্রী। আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাটাহাটি করছে। এ সময় তাদের গা থেকে ঘাম ঝরতে দেখা যায়। আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিষ্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন-ভন করছে। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরণের বেকারি সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। উৎপাদিত পাউরুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মোড়কে বিএসটিআই, বিডিএস নম্বর লেখা নেই। মোড়কের গায়ে কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তা উল্লেখ নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নোংরা পরিবেশ, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা এসব খাবার সামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। পেট ব্যথা, শরীর দুর্বলতাসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
পৌরসভার বত্রিশ এলাকার এক চা-দোকানি লাভলু মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ, ফুটপাতে চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নেই। কাস্টমাররা তো আর এসব জিজ্ঞাসা করে না। চা বা কলার সঙ্গে এসব বেকারি পণ্য তারা কিনে নিচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল হক মোল্লা দুলু বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা না থাকায় আমরা কোন কাজ করতে পারি না।
জেলা ক্যাব সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু বলেন, এর আগেও অনেক অবৈধ বেকারিতে জেলা প্রশাসন, র্যাব অভিযান চালিয়ে তাদের জেল জরিমানা করেছে। ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন ও র্যাবকে মনিটরিং এবং অভিযানের আহবান জানাচ্ছি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মোস্তফা জানান, অবৈধ বেকারিতে ভেজালজাত পণ্য উৎপাদন আইনত দ-নীয় অপরাধ। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সবসময় সচেতন। এ বিষয়টি আমরা কঠোরহস্তে দমন করবো এবং প্রত্যেক উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া আছে।