ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে বাড়িছাড়া ২৫ পরিবার

নড়য়িা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
🕐 ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মিন্টু ছৈয়াল (৩৩) বাহিনীর ভয়ে আট মাস যাবত ২৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের ২৫টি পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। অভিযুক্ত মিন্টু ছৈয়াল একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে আবেদন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, নড়িয়া উপজেলায় ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের আরশেদ আলী ছৈয়ালের ছেলে ইয়াকুব ছৈয়াল (৫৫) ২০১৯ সালের ১০ জুন সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে কলাবাগান যাচ্ছিলেন। পথে চান্দনীর আবু সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির সামনের পাকা সড়কে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তার ওপর বোমা নিক্ষেপ করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ইয়াকুবকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা প্রেরণ করেন। ঢাকা নেয়ার সময় ইয়াকুবের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারকে প্রধান আসামি করে ও তার পরিবারের ১৪ জনসহ ২২ জনকে আসামি করে ১১ জুন নড়িয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে মিন্টু ছৈয়াল (৩৩)। ইয়াকুব হত্যার পর জুয়েল খান, আউয়াল মুন্সী, রিয়াজুল ছৈয়াল, শহিদুল ছৈয়াল, রুবেল মুন্সী, মোহাম্মদ আলী ছৈয়াল, নজু ছৈয়াল, রাব্বি বেপারীসহ ২৫/৩০ নিয়ে বাহিনী বানিয়েছেন মিন্টু ছৈয়াল। এই বাহিনীর ভয়ে আট মাস যাবত অন্যত্র বসবাস করছেন চান্দনী গ্রামের নিরীহ প্রায় ২৫টি পরিবার। যারা ইয়াকুব হত্যা মামলায় জড়িত নয়। ওই নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট ও মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকির অভিযোগ উঠেছে মিন্টুর বাহিনীর বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নানা ধরনের অপকর্মের জন্য বাহিনী গঠন করেছেন মিন্টু ছৈয়াল। মিন্টুর বিভিন্ন অপকর্মে কেউ বাধা দিলে কিংবা থানা পুলিশকে জানালে নেমে আসে নির্যাতন। মিন্টু ও তার বাহিনীর ভয়ে চান্দনী গ্রামের অলিম উদ্দিন ঢালী, খলিল ঢালী, জলিল ঢালী, লাল মিয়া ঢালী, মতলেব ঢালী, কাদের ঢালী, জামাল ঢালী, জাকির ঢালী, আবুল বাসার ঢালী, আলী আকবর ঢালী, মাওলানা আব্দুল মালেক, হাফেজ সানাউল্লাহ্, আবুল কাশেম ঢালীসহ ২৫টি পরিবারের প্রায় ১৫০ জন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগী অলিম উদ্দিন ঢালী বলেন, আমাদের গ্রামে একটি হত্যার ঘটনা ঘটে। কে বা কারা হত্যা করেছে তাও জানি না। আমরা ওই হত্যা মামলার আসামিও না। কিন্তু ঘটনার পর মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আট মাস যাবত নিজ গ্রাম ছেড়ে পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়ি নড়িয়া ডিঙ্গামানিক গ্রামে থাকি। কত দিন অন্যের বাড়িতে থাকা যায়? পরিবার নিয়ে বাড়িতে এসে যেন নিরাপদে থাকতে পারি, সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চাই।

গ্রামবাসীরা জানান, হামলা, লুটপাট, মাদক ও বিভিন্ন অপকর্ম করে মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর লোকজন। তাদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। তাদের ভয়ে নিরীহ লোকগুলো বাড়ি ছাড়া। মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর লোকজনকে আইনের আওতায় আনলে গ্রামের মানুষ শান্তি পাবে।

ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ শিকদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম শিকদার বলেন, ২০১৯ সালের ১০ জুন চান্দনী গ্রামে একটি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে ইয়াকুব ছৈয়াল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আমিসহ আমাদের পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটেছি। মামলার আসামি সবাই জামিনে আছি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চান্দনী গ্রামের নিরীহ ২৫টি পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করেছে মিন্টু ও তার বাহিনী। যারা মামলার আসামি নয়। ওই বাহিনীর ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছে না পরিবারগুলো। গ্রামছাড়া পরিবারগুলো যাতে বাড়ি ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি।

তিনি আরও বলেন, মিন্টু ছৈয়াল তার বাহিনীর লোকজন নিয়ে মাদক সেবন ও বিক্রি করে। সাবেক মেম্বার সোরাফ হোসেন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধরও করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগও হয়েছিল।

এ বিষয়ে মিন্টু ছৈয়াল বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো মিথ্যা অভিযোগ করছে তারা। তাদের বাড়িতে আসতে আমি না করার কে? আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি কোনো ঝামেলার ভেতরে যাই না।

জানতে চাইলে নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। খবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্যা নেয়া হবে। অপরাধীরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

 
Electronic Paper