ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গাজীপুরে বন দখলে ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট

তানজেরুল ইসলাম, গাজীপুর
🕐 ১০:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২০

গাজীপুরে বন দখলকারীদের ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী একটি চক্র গড়ে উঠেছে। এসব চক্রকে ভেতরে ভেতরে মদদ দিচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার মাতব্বর শ্রেণির কিছু লোক। বন দখলকারীরা গাছ বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নাম। তা ছাড়া ভূমি সংক্রান্ত এবং আইনি জটিলতার পাশাপাশি বন ও পরিবেশ-প্রকৃতি প্রেমীরাও এসব চক্রের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন। গাজীপুরে বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা এবং হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের সালনা বিটের অধীন ১৯ নম্বর হাতিয়াব মৌজার সিএস/এসএ ১৮০ ও ৩৯৯ নম্বর দাগসহ অন্যান্য দাগ মূলত ভাওয়াল কোর্ট অব ওয়ার্ডস এস্টেট জমিদারের এখতিয়ারভুক্ত ছিল। পরে তা অধিকৃত ও অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রথমে এসব সম্পত্তি ঢাকা জেলার আওতায় থাকলেও পরে গাজীপুর জেলা হলে তা ওই জেলার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই বনভূমিকে ২০১২ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের সালনা বিট কাম চেক স্টেশন অফিসার মো. আবদুল মান্নান জানান, বিগত দিনে ১৯ নম্বর হাতিয়াব মৌজার সিএস ১৮০ ও ৩৯৯ দাগের বনভূমি লিজ দেওয়া হয়। তবে ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ম্যানেজার, কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেট স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ‘১৮০ ও ৩৯৯ নম্বর সিএস দাগের জমি লিজ নবায়ন না করতে চিঠি দেন। তবে লিজ গ্রহীতা আবুল কাশেম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করলে আদালত প্রথমে ওই বনভূমিতে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আদালত।

তিনি আরও জানান, গত ১৫ জানুয়ারি ভূমি সংস্কার বোর্ডের কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পেয়েছেন। ওই চিঠিতে ‘নালিশি জমির দখল ও অবস্থানের ওপর ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থাদেশ প্রদান এবং পরবর্তীতে উক্ত নালিশি জমিতে বিগত ২১ নভেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখ থেকে আগামী এক বছরের জন্য স্থিতাবস্থার মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়।

রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. হারুন-অর-রশিদ খান জানান, ১৯ নম্বর হাতিয়াব মৌজায় লিজ গ্রহীতার মদদে তার বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অথচ ঘটনার দিন তিনি গাজীপুরে কর্মস্থলে ছিলেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্নভাবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করছে কুচক্রী মহল।

হাতিয়াব এলাকার শহীদুল ইসলাম জানান, লিজ গ্রহীতাদের কেয়ারটেকার ছিলেন আবদুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি বিভিন্ন গার্মেন্টের ঝুট কাপড় বনভূমিতে রেখে পুড়তেন। তিনি এর প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে তাকে প্রধান আসামি করে জয়দেবপুর থানায় বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে একটি মামলা করেন আবুল কাশেম নামে এক ব্যক্তি।

ওই মামলায় জুয়েল দর্জি, সাইফুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, ফজলুল হককে আসামি করা হয়েছে। অথচ ফজলুল হক দর্জির বয়স ৮৯, অথচ এজাহারে তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৫৮ বছর।

আতিকুল জানিয়েছেন, তাকে ও তার ভাইকে একটি ‘কাল্পনিক’ অভিযোগে করা মামলার আসামি করা হয়েছে। তবে লিজগ্রহীতার দাবি তিনি মানবিক কারণে মামলাটি নিয়ে অগ্রসর হননি কিন্তু উল্টো আসামিরাই তাকে নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করছেন। বিষয়টি তিনি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন বলেও দাবি ওই লিজগ্রহীতার।

 
Electronic Paper