অব্যাহত ভাঙনে বসতি ফসলি জমি বিলীন
রাশেদুল হাসান কাজল, ফরিদপুর
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০১৮
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী, ফাজেলাখার ডাঙ্গী ও এমপি ডাঙ্গী এলাকায় গত কয়েক দিনের অব্যাহত পদ্মানদীর ভাঙনে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে ২০টি বসত বাড়ি, প্রায় ৫০বিঘা ফসলি জমি ও বিভিন্ন প্রজাতির সহস্রাধিক গাছপালা। এ ছাড়া ভাঙনের কবলে পড়ে এ পর্যন্ত মোট দুই শতাধিক বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে যাওয়া হয়েছে।
ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত রোববার ও গতকাল সোমবার নতুন করে এমপি ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে নদীতে বিলীন হয়ে যায় পাঁচটি বসতভিটে, শতাধিক গাছপালা। অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে দশটি বসতবাড়ি। চরম ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এমপি ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এমপি ডাঙ্গী মাদ্রাসা এ ছাড়া ফাজেলখার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্যা ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি মসজিদ, পাকা সড়ক ও বেড়িবাঁধ হুমকিতে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার ভোরে বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে দমকা হাওয়া ছিল। হঠাৎ করেই শেখ আলাউদ্দিন, শেখ সোহরাব, শেখ রহিম, মনসুর উদ্দিন ও আ. সালাম শেখের বসতভিটে ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এমপি ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অবস্থান করছে। কেউ আবার আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শেখ আলাউদ্দিন বলেন, হঠাৎ পদ্মা পাড়ের প্রচুর গর্জন শুনে এগিয়ে যাই। একের পর এক চাপড়া জমি বিলীন হতে দেখি। একইসঙ্গে বসতভিটেসহ গাছপালা পদ্মার গর্ভে স্রোতের সঙ্গে মিলে যায়। এ অবস্থা দেখে চিৎকার করলে এলাকাবাসীর সহায়তায় অন্য বসতঘরগুলো সরিয়ে স্কুল মাঠে নিয়ে রাখা হয়।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আমেনা বেগম ও সামেলা আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, সারা জীবনের স্বপ্ন সাধনা মুহূর্তের মধ্যেই পদ্মায় মিশে গেছে। আমরা কোথায় যাব, কোথায় থাকব?
কয়েকদিন আগে নতুন করে ভাঙন দেখা দিলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হেকীম। এ সময় তিনি ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে বালিয়াডাঙ্গী ও ফাজেলখার ডাঙ্গী ভাঙন প্রশোমিত করতে দ্রুত জিও ব্যাগের অস্থায়ী ডাম্পিং করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এছাড়াও ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান এজিএম বাদল আমিন ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান নিয়মিত ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং উপজেলার প্রধান সড়কসহ সংলগ্ন প্রাইমারি স্কুলটি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কার্যক্রম শুরু করেছি।
চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান এজিএম বাদল আমিন বলেন, আপাতত ভাঙনমুখী স্কুলটি সরিয়ে নেয়ার কোনো চিন্তা-ভাবনা করছি না। পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে বেশি পরিমাণে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে দ্রুত সহায়তা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা পাঠানো হয়েছে।