ঠোঁট লাল করা লালডিঙ্গি পান
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
🕐 ৫:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
পান এক ধরনের লতা জাতীয় গাছের পাতা। এটা কারও কাছে সখের বস্তু। কারও কাছে নেশার সাথী। দক্ষিণ এশিয়াসহ আমাদের দেশে অনেক নারী-পুরুষ পান-সুপারিকে নানা উপাচারে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ করে রেখেছেন। বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, ভদ্রতা এবং আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে।
এক সময় বিয়ে-শাদি পূজা-পার্বনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পান ছাড়া চলতোই না। কনের বাড়িতে বর পক্ষ পান না নিয়ে এলে বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যেত। প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন উপকরণে পান তৈরি এবং তা সুন্দরভাবে পানদানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেত।
ওই সময়ের নানী দাদিদের পান খাওয়ার শখ ছিল গল্পের মতো। তারা খুবই সৌখিনতার আদলে পান খেতেন।
কিশোরগঞ্জের জেলখানা মোড়ে এক ধরনের আগুন পান বিক্রি হয়। কুল্লি পাকানো এ পানে নানান ধরনের মসলা মেশানো থাকে। খাওয়ার আগে মসলায় আগুন ধরিয়ে খেতে হয়। পান খেতে খেতে আগুনটা এক সময় নিভে যায়। ছারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সুগন্ধ। তবে এসব পান খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারদের নিষেধাজ্ঞাও আছে।
কিশোরগঞ্জের ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন ডা. ফারুক আহমেদ বলছেন, রঙ-বেরঙের মসলাযুক্ত পান-সুপারি-জর্দার কারণে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া দাঁতের ক্ষয়, মাঢ়ির রোগেরও অন্যতম কারণ এ পান সুপারি।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পান উৎপাদন হয়। পানের মান ও ধরনের ভিন্নতা আছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট অঞ্চলে বেশ কয়েকটি পানের জনপ্রিয় জাত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লালডিঙি পান নিয়ে। এ পান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের কাছে খুব পরিচিত। আকারে বড়, মসৃন, পুরু এবং সুস্বাদু লালডিঙি পানের চাষ কিশোরগঞ্জেই বেশি হয়।
কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ পান বলতে লালডিঙিকেই বোঝে। প্রাকৃতিক সুগন্ধিযুক্ত, পুরু ও রসে ভরপুর থাকায় তাদের কাছে এ পান সমাদৃত।
পান বিক্রেতা ফিরোজ মিয়া (৫০) জানান, দেশের অন্যান্য পানের চেয়ে এ পানের আকৃতি অনেক বড়। কোনো কোনো পান ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। পানের বোঁটার আকারও বড়। পানের পুরুত্ব, মসৃন ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এ পানটা লোকজন পছন্দ করে।
এখানকার চাষিরা লালডিঙি এবং ঘয়াসুর জাতের পান চাষ করে থাকেন।