অধস্তনের দাপটে অসহায় ঊর্ধ্বতন
তানজেরুল ইসলাম, গাজীপুর
🕐 ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৮
গাজীপুরে রেঞ্জ কর্মকর্তাদের কাছে অসহায় ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তারারা। রেঞ্জ কর্মকর্তাদের প্রভাব ও দাপটেই চলছে এখানকার বন কার্যক্রম। অব্যাহতভাবে বন দখল, বন উজাড়, বনের পরিবেশ ধ্বংসে পেছনে রয়েছে অসাধু রেঞ্জ কর্মকর্তাদের হাত।
এসব নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহুবার তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও এখানকার চিত্র বদলায় না। উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দুয়েকটা ঘটনার তদন্ত ও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও অদৃশ্য ক্ষমতাবলে বহাল তবিয়তেই রয়ে যান রেঞ্জ কর্মকর্তারা। এমনকি পত্রপাট বদলির চিঠি ইস্যু করেও রেঞ্জ কর্মকর্তাদের ‘মধুর চাক’ থেকে নাড়াতে পারেন না বিভাগীয় শীর্ষ কর্তারা।
গাজীপুরের বন দখল নিয়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর ‘গাজীপুরে বনখেকোরা গিলে খাচ্ছে রেঞ্জ অফিসও’, ৩০ অক্টোবর ‘গাজীপুরে বেহাত হচ্ছে বনভূমি’ শীর্ষক দুটি এবং ১১ এপ্রিল ‘বিট অফিসারই বনের রাজা’ ১২ এপ্রিল ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য’, ১৩ এপ্রিল ‘ক্ষমতাধররাই ভক্ষক’ ও ১৪ এপ্রিল ‘বিলুপ্তির হুমকিতে জীববৈচিত্র্য’ শীর্ষক চারটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক খোলা কাগজে। প্রতিবেদনগুলোতে বন দখলকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্যসহ বনের শতাধিক দখলকৃত সিএস দাগও উল্লেখ করা হয়। এসব সংবাদে উল্লিখিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো তদন্তে গেছে কি না তার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে গত বছর অক্টোবরে প্রকাশিত সংবাদের পর এ বছরের মার্চ মাসে বন সংরক্ষক (সিএফ) রকিবুল হাসান মুকুল গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মাহিনুর রহমানকে সিলেট বিভাগে বদলির আদেশ দিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। কাজী মাহিনুরের স্থলে জেলার শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেনকে অতিরিক্ত হিসেবে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব নিতে চিঠি দেন ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউছুপ। তবে প্রধান বন সংরক্ষকের (সিসিএফ) এক অফিস আদেশে (স্মারক : ১৪৯/পি,১৯/০৩/১৮) রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী মাহিনুর রহমানের বদলীর আদেশ দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। সে স্থগিতাদেশের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস হতে চলেছে। কিন্তু এর পরও কাজী মাহিনুর বহাল তবিয়তে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জেই কর্মরত আছেন। এ খবর চাউর হওয়ার পর সর্বশেষ গত ৩ জুন ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা পুনরায় শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তাকে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পত্রপাট নির্দেশ দেন। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতার নির্দেশে কাজী মাহিনুরও যেমন রেঞ্জ থেকে বদলি হন না। তেমনি শ্রীপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেলও রাজেন্দ্রপুরে এসে তার অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউছুপ বলেন, ‘ওই রেঞ্জ কর্মকর্তাকে (কাজী মাহিনুর রহমান) অনেক আগেই রিলিজ দিয়েছি। উপর মহলের তদবিরে তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।’
উপর মহল কারা? জানতে চাইলে বন সংরক্ষক (সিএফ) রকিবুল হাসান মুকুল বলেন, ‘আমি তাকে (কাজী মাহিনুর রহমান) বদলির আদেশ দিয়েছি। বিষয়টি এখন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।’
উপর মহলের সন্ধানে প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) সফিউল আলম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
বন-জঙ্গল দখল অব্যাহত : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও কালিয়াকৈর রেঞ্জে বন দখল চলছেই। তবে দৈনিক খোলা কাগজে এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের পর বন সংরক্ষকের (সিএফ) নির্দেশে ওই দুটি রেঞ্জ তদন্ত করছেন সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এনামুল হক। তবে এরই মধ্যে এ কর্মকর্তার তদন্তে কচ্ছপ গতি ও বনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সখ্যের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ মার্চ মহাখালী বন ভবনে এ কর্মকর্তার অফিসকক্ষে কালিয়াকৈরে বন দখলে অভিযুক্ত দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের খবর গত ১২ এপ্রিল দৈনিক খোলা কাগজে প্রকাশিত হয়। অথচ এ কর্মকর্তাকেই কালিয়াকৈরে বন দখলের ঘটনা তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ১২ এপ্রিল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে কালিয়াকৈরের মৌচাক বিটের ৩৯টি সিএস দাগ উল্লেখ করে বন দখলের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত তলেও তদন্তে মাঠে নামেননি বনের ঊর্ধ্বতন কেউ। মৌচাক বিট কর্মকর্তা সজীব কুমার মজুমদার নিজেই জানিয়েছেন, তার বিটের অধীন ২০৯৯ একর বনভূমির অর্ধেকটা দখল হয়েছে এবং সীমানা নির্ধারণ ছাড়াই তিনি একটি স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন যা ২৮ এপ্রিল দৈনিক খোলা কাগজে প্রকাশিত হয়। এর পরও এ বিট কর্মকর্তার অনিয়ম তদন্তে বন বিভাগ দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।