ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রাণ গেল মায়ের একই বেডে কাতরাচ্ছে মেয়ে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
🕐 ১০:০২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০১৯

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় মাদারীপুরে মারা গেছেন নাদিরা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ। তার বাড়ি কালকিনি পৌরসভার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামে। তিন দিন ধরে কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে গতকাল ভোর রাতে মাদারীপুর সদর হাসপতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একই বেডে চিকিৎসাধীন আছে নাদিরার মেয়ে খাদিজাও (১০)। নাদিরার মৃত্যুশোক ভুলে এখন মেয়ে খাদিজাকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বজনরা।

মৃতের পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গৃহবধূ নাদিরা বেগমকে গত ৩০ জুলাই কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে শুক্রবার সকালে কালকিনি হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেওয়া হয়।

কিন্তু সেখানে কোনো হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে শুক্রবার রাতেই আবার কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে শনিবার ভোরে নাদিরার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেখানে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। নাদিরার স্বামী আলমগীর মোড়ল। তার মেয়ে খাদিজা আক্তারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মায়ের বেডেই।

খাদিজা অভিযোগ করেছে, ডাক্তারের অবহেলায় তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সে বলেছে, ‘ডাক্তারদের কাছে রাতে চিকিৎসার জন্য গেলে তিনি আমার বোনের সঙ্গে বকাঝকা করেন। তারপর আমার মাকে ঘুমের ওষুধ দেন। ওই ওষুধ খাওয়ালে আমার মার মুখ থেকে ফ্যানা বের হতে থাকে। পরক্ষণে ডাক্তার মাকে মাদারীপুর নিয়ে যেতে বলেন।’

কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মা ও মেয়ে কয়েকদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমাদের এখানে ডেঙ্গু জ্বরের তেমন চিকিৎসা নেই। আমরা রোগীর পরিবারের সদস্যদের অনেকবার বলেছি আপনারা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান। তারা নেয়নি। তার পরে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। মাদারীপুর নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন খলিলুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত মাদারীপুরে ৪৮ ডেঙ্গ রোগীর শনাক্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে এনছেন। তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মাদারীপুর সদর হাসপাতাল, শিবচর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন।

বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার ডেঙ্গু জ্বরে কালকিনি পৌর এলাকার ঠেঙ্গামাড়া গ্রামের বারেক বেপারীর ছেলে জুলহাস বেপারী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জন্মদিনে ধরা পড়ল ডেঙ্গু, পর দিনই স্কুলছাত্রের মৃত্যু!
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃত রাইয়ান সরকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়ে রাইয়ানের এক আত্মীয় বলেন, গত ৩১ জুলাই ছিল রাইয়ানের ১১তম জন্মদিন। ওই দিনই জ্বর এলে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রক্ত দেওয়া হয় এবং লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরপর অবনতি হলে গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মারা যায়।

 
Electronic Paper