গুজবে নিহত ভ্যানচালক মিনুর স্ত্রীর আবেদন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০২, ২০১৯
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ভ্যানচালক মিনু শেখ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। মিনুর মৃত্যুতে তার স্ত্রী রিনা আক্তার ৭ বছরের ছেলে ও বৃদ্ধ শ্বশুরকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে দিন। মিনু শেখ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার স্বামী ছিলেন একজন পরিশ্রমী মানুষ।
পরিশ্রম করে সংসার চালাতেন। তিনি কোনো অপকর্মের জন্য মারা যাননি। গুজবে মারা গেছেন। গুজব ঠেকানো দায়িত্ব সরকারের। তিনি দেশের জন্যই মারা গেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বামী হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
রিনা আক্তার আরও বলেন, রাস্তা ও ঘরে বন্যার পানি ঢোকায় মিনুর ভ্যান চালানো বন্ধ হয়ে যায়। আমরাও উঁচু সড়কের পাশে ঠাঁই নিই। এ অবস্থায় কারেন্ট জাল কেনার জন্য মিনু টাকা ধার করে পাশের বাড়ির শাকের শেখকে সঙ্গে নিয়ে গত ২১ জুলাই কালিহাতী বাজারে যায়। ওই হাটে ১০-১১ বছরের এক ছেলে মিনুর পকেট থেকে টাকা চুরি করার সময় তার হাত ধরে ফেলেন তিনি। এ সময় ছেলেটি চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা আমার স্বামীকে ছেলেধরা ভেবে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও মানুষগুলো তাকে ছাড়েনি।
পরিস্থিতির পূর্বাপর বর্ণনা করে নিহত মিনুর স্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পাশে দাঁড়াতেন তাহলে বৃদ্ধ শ্বশুর ও সন্তানদের নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মিনুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম।
এ সময় মিনুর বাবা কোরবান আলী শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মিনুর স্ত্রী, সন্তান ও আমাগো দেখার আর কেউ রইল না। মিনু তার সন্তানদের মানুষ করে যেতে পারল না। আমার ছেলেকে যারা বিনা অপরাধে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর শরিফুল আলম সোহেল বলেন, ঘটনার দিন মিনু পাশের বাড়ির শাকের শেখকে সঙ্গে নিয়ে জাল কিনতে যান। ওই ঘটনার পর থেকে শাকের শেখের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজে বের করতে পারলেই ঘটনার আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।
কালিহাতী থানার এসআই ও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নিহত মিনুর পরিবার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই দফায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই মিনু মিয়া কালিহাতীর সয়া হাটে মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৯ জুলাই সকালে মারা যান তিনি।