ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মরার মতো পড়ে থাকেন মাসুম

সাজন আহেম্মদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
🕐 ১০:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে যখন হামলা হয়, তখন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের ছেলে ওমর জাহিদ মাসুম (৩৩) তার ভেতরেই ছিলেন। একটি গুলি তার বাম কাঁধের ওপরের দিকে এসে লাগে। এরপর মারা যাওয়ার ভঙ্গিতে রক্তাক্ত মানুষের স্তূপে পড়ে থাকেন তিনি। এভাবে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার পর কোনো রকমে মসজিদ থেকে বেরিয়ে দেয়াল ডিঙিয়ে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন মাসুম। নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী ওমর জাহিদ মাসুমের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ধনকীপাড়া গ্রামে। তিনি কটিয়াদীর সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ হাবিবুর রহমান দয়ালের ছেলে। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি নিউজিল্যান্ডে যান। পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই একটি সুপার শপ এবং একটি পেট্রল পাম্পে ব্যবস্থাপক হয়ে কাজ করছেন তিনি। ক্রাইস্টচার্চ মসজিদ আল নূর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে সস্ত্রীক বসবাস করেন মাসুম।

ক্রাইস্টচার্চ হামলা থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মাসুম গত শনিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে সেই হামলার বিবরণ দেন। মাসুম বলেন, ‘জুমার দিন হওয়ায় ওই দিন কাজ শেষ করেছি সাড়ে ১২টায়। কাজ শেষ করে বাসায় আসি। তারপর নামাজে যাই। আল নূর মসজিদ আমার বাসা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূর হলেও সেন্ট্রাল মসজিদ হওয়ায় জুমার নামাজ ওই মসজিদেই পড়ি। মসজিদে দেড়টায় খুতবা শুরু হয়। খুতবা শোনার জন্য প্রতি শুক্রবার একটু আগেই আমি মসজিদে যাই। ঘটনার দিন ১টার মধ্যে মসজিদে পৌঁছাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমাম সাহেব আরবিতে খুতবা শুরু করলেন। হঠাৎ পেছন দিক থেকে আতশবাজির মতো একের পর এক আওয়াজ কানে আসতে লাগলো। প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারি নাই। মানুষ চিল্লাচ্ছে, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। বুঝতে পারলাম খারাপ কিছু হচ্ছে। আমরা মসজিদের বড় কক্ষের সামনের দিকে ছিলাম। এক পর্যায়ে এদিকেও গুলি শুরু হলো। প্রাণভয়ে আমি মসজিদের কক্ষের ডান দিকের কোণায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম। অস্ত্রধারীরা একের পর এক গুলি করছে। একটা গুলি আমার বাম কাঁধে এসে লাগলো। গুলিটা চামড়া ভেদ করে বাইরে চলে যায়। কাঁধে গুলি লাগার পর দম বন্ধ করে আমি মেঝেতে শুয়ে পড়ি। গুলির শব্দ থামার ৪-৫ মিনিট পর্যন্ত আমি ওভাবেই শুয়েছিলাম। পরে চোখ মেলে দেখি আমার চারপাশে লাশ আর লাশ। এরপর মসজিদ থেকে বেরিয়ে দেয়াল ডিঙিয়ে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই আমি।

মাসুম বলেন, নিউজিল্যান্ডের মতো একটি দেশে এ রকম হামলা হবে জীবনেও ভাবিনি। হামলার পর চিকিৎসা নিয়ে এখন আমি বাসায়। তবে ভুলতে পারিছি না এই ভয়াবহ দৃশ্য। মূলত, লাশের স্তূপ থেকে আমি বেঁচে এসেছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন।

 
Electronic Paper