ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঠান্ডা মাথায় চলে নৃশংসতা

শ্রীপুরে স্বামীর লাশ ৬ টুকরো করেন স্ত্রী

গাজীপুর প্রতিনিধি
🕐 ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০১৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যক্তির ৬ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে ওই ব্যক্তির ৬ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে এবং তার স্ত্রী জেবুন নাহার মেঘনাকে গ্রেপ্তার করে।

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার।

এসপি বলেন, গ্রেফতারের পর গতকাল শুক্রবার রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোমহর্ষক ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন জেবুন নাহার। শনিবার (২৬ জানুয়ারি) জেবুন নাহার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বলে জানিয়েছেন।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেবুন নাহার মেঘনা জানান, প্রায় ৫ বছর আগে ময়মনসিংহের উলামাকান্দি গ্রামের রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। রফিকুল ইসলাম গত আড়াই বছর ধরে শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল ইসলাম হাউ আর ইউ কারখানায় এবং জেবুন নাহার নিট কম্পোজিট কারখানায় কাজ করতেন। ওই দম্পতির ৪ বছরের এক মেয়ে রয়েছে।

স্বামীর পাশাপাশি চাকরি করে জেবুন নাহার যা বেতন পেতেন তা থেকে প্রতিমাসে নিজের মা-বাবাকে কিছু টাকা দিতে চাইতেন। কিন্তু বাধ সাধেন স্বামী রফিকুল ইসলাম শেখ। শুধু বাধাই নয়, ওইসব ঘটনায় তাকে বিভিন্ন সময় মারধরও করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন জেবুন নাহার।

এই আর্থিক লেনদেন নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। এর জেরেই ঝগড়ার একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে স্বামী রফিকুল ইসলামকে প্রথমে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহটি ঘরের ওয়ারড্রবের ভেতর রেখে কর্মস্থলে চলে যান। এ সময় তাদের মেয়েটি পাশেই জেবুন নাহারের ছোট বোনের বাসায় ছিল।
রাত ৮টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে ১১টা পর্যন্ত তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। সেখানেই রাতের খাবার খান জেবুন। রাত ১১টার দিকে নিজের বাসায় গিয়ে রান্নাঘরের বটিতে শান দেন।

লাশের পরিচয় যেন শনাক্ত না হয় সেজন্য বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ওয়ারড্রব থেকে স্বামীর মরদেহ বের করে বটি দিয়ে পা, হাত ও মাথা কেটে ৬ টুকরো করেন তিনি।

জেবুন নাহার প্রথমে মরদেহের দুই পা কাটেন। পরে দুই হাত কেটে মাথাও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। লাশ ৬ টুকরো করা মরদেহটি গুমের উদ্দেশ্যে একটি বস্তায় ভরে ফেলেন। পরে দুই হাত ও বিচ্ছিন্ন মাথা ময়লার ড্রামে ফেলেন। এরপর বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে ময়লার ভাগাড়ে বস্তাবন্দি দেহটি ফেলে আসেন। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে শৌচাগারের পেছনে নিয়ে ফেলেন পায়ের দুটি টুকরো। শৌচাগারের পাশে দুই হাত ও খণ্ডিত মাথা রাখা ড্রামটিও ফেলে যান। সবশেষে ব্যবহৃত বটিটিও বাইরে লুকিয়ে রাখেন জেবুন নাহার। রাত আড়াইটার নাগাদ জেবুন নাহার এসব কার্যক্রম চালান।

এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জেবুন নাহারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাতেই নৃশংসতায় ব্যবহৃত বটিটি জব্দ করা হয়েছে।
এসআই আরও জানান, তবে এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত রয়েছে কী না পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জেবুন নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলামসহ পুলিশ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 
Electronic Paper