ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পুরুষশূন্য জিরাফ পরিবার

গাজীপুর প্রতিনিধি
🕐 ২:০৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে একটি জিরাফের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পুরুষ শূন্য হলো পার্কের জিরাফের পরিবারটি। কোর সাফারীর জিরাফ বেষ্টনীতে জিরাফটির মৃত্যু হয়েছে বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়। ওই পার্কে এ যাবৎ ৬টি জিরাফের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার সকালে সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষের গঠিত মেডিকেল বোর্ড মৃত্যুর কারণ জানার জন্য মৃত জিরাফের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়। পার্কের এ অবস্থার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. নিজাম উদ্দিনসহ কয়েকজনের কর্তব্যে অবহেলাকেই দায়ী করেছেন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ আরো কয়েক কর্মকর্তা।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে কয়েক দফায় ১২টি জিরাফ আমদানি করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। এর মধ্যে ৪টি পুরুষ ও ৮টি নারী জিরাফ ছিল। উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে পার্কে ৪টি জিরাফ বাচ্চার জন্ম হয়। এর মধ্যে ৩টিই ছিল নারী ও একটি ছিল পুরুষ শাবক। গত বছরের শেষের দিকে পুরুষ জিরাফ শাবকটি মারা যায়। পার্কে এখন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক তিনটি নারী জিরাফসহ মোট ৭টি নারী জিরাফ রয়েছে। পুরুষশূন্য হয়ে পড়ল জিরাফ পরিবার। জিরাফ পরিবার পুরুষশূন্য হয়ে যাওয়ায় নতুন করে কোন জিরাফ জন্ম নেবে না এ পার্কে। শেষ পুরুষ জিরাফটির মৃত্যুতে পার্কে জিরাফের বংশবৃদ্ধি এখন চরম সঙ্কটে পড়ল। 

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, প্রায় দুইমাস ধরে ওই জিরাফটি পাতা জাতীয় খাবার খেলেও দানাদার খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি পার্কের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিশেষজ্ঞ মো. রফিকুল আলম, ঢাকা চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটরসহ কয়েকজন চিকিৎসকের নজরে দেয়া হয়। পরে তারা ওই জিরাফটির জন্য ব্যবস্থাপত্রসহ বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

কিন্তু বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে গিয়ে ওই জিরাফটির মৃতদেহ দেখতে পান কর্তব্যরত পার্ক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। পরে মৃতদেহটি পার্ক চত্বরে মাটিচাপা দেয়া হয়।

এ যাবৎ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ছোট-বড় ৭টি জিরাফের মৃত্যুতে পার্কে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজাম উদ্দিনের গাফিলতিকে দায়ী করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পার্ক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, বন্যপ্রাণি সুপারভাইজার মো. আনিসুর রহমান, সরোয়ার হোসেন খানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।

তারা জানান, বন্যপ্রাণী চিকিৎসক নিজাম উদ্দিনের জন্য পার্কের ভেতর আবাসিক সুবিধা থাকার পরও তিনি থাকেন পার্ক থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শেখ কামাল ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের আবাসিক এলাকায়। বিভিন্ন অজুহাতে পার্কেও ঠিক মতো আসেন না। তিনি পার্কের প্রতিষ্ঠাকালীন ভেটেরিনারি সার্জন (চিকিৎসক)। এমতাবস্থায় কয়েক মাস আগে হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন নামের ভেটেরিনারি অফিসার পার্কে যোগ দেন। তিনি নিজাম উদ্দিনের কথা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত পার্ক কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, বন্য প্রাণিরা যেহেতু কথা বলতে পারে না। তাই তাদের যত্ন নিতে হয় খুব কাছ থেকে। কিন্তু নিজাম উদ্দিন তা করেন না। শুধু জিরাফ নয়, অবহেলায় বিভিন্ন পশু-পাখিও অকালে মারা গেছে। এ ব্যাপারে পার্কের প্রকল্প পরিচালককেও অবগত করা হয়েছে।

পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. সামসুল আজম বলেন, তিনিও পার্কে বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করতে গিয়ে নিজাম উদ্দিনকে পাননি। যা পরিদর্শন বুকেও লেখা রয়েছে। অতিসত্ত্বর পার্কে পুরুষ জিরাফ আমদানি করা হবে। তবে আশার কথা হলো পার্কের আরো দু-একটি জিরাফ গর্ভধারণ করেছে। তাদের থেকেও পুরুষ জিরাফ জন্ম নিতে পারে।

এ বিষয়টি নিজাম উদ্দিন অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি সব সময় পার্কে অবস্থান নিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেন। তবে পার্কে তার বিরুদ্ধে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি সর্বদা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলেও জানান।

 

 
Electronic Paper