চৈতি কম্পোজিটের বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যস্ত
এম কামরুল ইসলাম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
🕐 ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
অর্থনৈতিক অঞ্চল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে টিপুরদী এলাকায় অবস্থিত চৈতি কম্পোজিটের বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যয়ে পড়েছে। শিল্পকারখানাটিতে বর্জ্য নিষ্কাষনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বিষাক্ত বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আশপাশের ২০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জীবন।
শিল্পকারখানাটি সুতা তৈরি ও সুতা রং করার জন্য ২০০৬ সাল থেকে উৎপাদন শুরু করে। এ শিল্প কারখানাটির তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) যথাযথ ব্যবহার না করায় উৎপাদিত সুতা তৈরি ও সুতা রং করার তরল বর্জ্য মারিখালি নদীর সংযোগ খালে পড়ছে। ফলে এলাকার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। কারখানা থেকে বের করে দেওয়া বর্জ্য খালের পানিতে বিষক্রিয়া ঘটিয়ে মোগরাপাড়া, বাড়ি মজলিশ, গোহাট্টা, ফুলবাড়িয়া, ষোলপাড়া, দমদমা, কাবিলগঞ্জ, দলদার, লেবুছাড়া, ভাটিপাড়া, বিন্নিপাড়া ও পৌর এলাকার মল্লিকের পাড়া, টিপরদি, রতনদি, গোয়ালদিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করেছে।
বিষাক্ত পানি ব্যবহার করে এলাকার মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাষন বন্ধের সুফল পাননি।
সরেজমিন গত শনিবার ঘুরে দেখা যায়, টিপুরদী এলাকায় কারখানাটির গোপন নালা দিয়ে দিনে-দুপুরে বের হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য। বিষাক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে পরিবেশও বিষাক্ত হয়ে পড়ছে।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কারখানাটিতে ইটিপি থাকলেও ব্যয়বহুল বলে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের কেউ কারখানা পরিদর্শনে আসলে অল্প সময়ের জন্য ইটিপি চালু রাখা হয়। পরে তা বন্ধ করে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি গোপন নালা দিয়ে বের করা হয়। এতে পানির দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত। চৈতীর দূষিতবর্জ্যে মেনিখালী, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কালো ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
সোনারগাঁও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন জানান, চৈতীর দূষিত বর্জ্য বন্ধের দাবীতে বার বার মানববন্ধন করলেও প্রশাসন নীরব থাকছে। এ ব্যপারে তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
২০০৮ সালের ৪ মার্চ পরিবেশ দূষণ হওয়ার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও যৌথবাহিনী কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে সিলগালা করে দেয়। পরে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাসীন দলের অসাধু কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতার বলে বন্ধ থাকা শিল্প কারখানাটি পুনরায় চালু হয়। যার ফলে অত্র এলাকায় বিষাক্ত বর্জ্যমিশ্রিত খালের পানির দুর্গন্ধে রোগ বালাই ছাড়াও লোকজন মুখে কাপড় বেঁধে চলাচল করছে।
চৈতী কম্পোজিট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপক বদরুল আলম বলেন, আমরা নিয়মিত ইটিপি ব্যবহার করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।