ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টাঙ্গাইলের নদী-খাল দখল হয়ে যাচ্ছে

রনজিৎ রাজ সরকার, টাঙ্গাইল
🕐 ৯:৫২ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০১৮

টাঙ্গাইলে ছোট-বড় মিলিয়ে নদী রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে যমুনায় বর্ষা মৌসুমে কিছুটা পানি থাকলেও ধলেশ্বরী, বংশাই, লৌহজং, খিরু, যুগনী, ফটিকজানি, এলেংজানি, লাঙ্গুলিয়া, ঝিনাই এবং তার শাখা নদীগুলো পলি জমে মরা খালে পরিণত হয়েছে।

তার সঙ্গে কারখানার বর্জ্যে মিশ্রিত দূষিত পানি জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাবশালীরা নদীর জায়গা দখল করে তৈরি করছে ঘরবাড়ি। নদীর জমি দখল করে আবাদি জমিকে পরিবর্তিত করা হচ্ছে। অথচ এসব নদী রক্ষায় প্রশাসনিক কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।  
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলে বয়ে যাওয়া বংশী বা বংশাই নদী পুরনো ব্রহ্মপুত্রের শাখা। এর দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার। নদীটি জামালপুরের শরীফপুরে থেকে উৎপন্ন হয়ে টাঙ্গাইল, গাজীপুরের সাভারে কর্ণতলী নদীর সঙ্গে মিশে কিছু দূর অগ্রসর হয়ে আমিনবাজারে এসে তুরাগে মিলিত হয়েছে। তুরাগ কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে মিলিত হয়েছে বুড়িগঙ্গায়। ফলে বংশাই নদীর ইতিহাস হলো চারটি জেলা ও ১০টি উপজেলা অতিক্রম করে ৩২১টি মৌজার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া। এ সমগ্র এলাকায় মানুষ ও প্রাণী জগতের প্রাণই ছিল বংশী নদী।
ঝিনাই নদীর দৈর্ঘ্য ১৩৩ কিলোমিটার। এ নদীটি টাঙ্গাইল, শেরপুর ও জামালপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঝিনাই নদীটি আবার জামালপুরের বাউশী থেকে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর একটি শাখা যমুনার পূর্ব পাশ দিয়ে ভূঞাপুর উপজেলার সাত কি.মি. অতিক্রম করে কালিহাতী উপজেলার ধলেশ্বরীর উৎসমুখের কাছে মিলিত হয়েছে। অপর শাখাটি দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে বাসাইল উপজেলার ফুলকী হয়ে বংশাই নদীতে মিলিত হয়েছে। অন্য অংশটি দক্ষিণমুখী হয়ে বাসাইলের ফুলকী-আইসড়া, দেউলী, দাপনাজোর, নর্থখোলা হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। যমুনা-ধলেশ্বরী বেষ্টিত বদ্বীপ বিশেষ উপজেলা হলো নাগরপুর। তা ছাড়া এখ সময় সিরাজগঞ্জের চৌহালীর পূর্বাংশ-নাগরপুর এবং দৌলতপুরের অংশ বিশেষসহ পুরো এলাকা ছিল নদী এলাকা। এখন ওই এলাকায় চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। নাগরপুরের নোয়াই নদীর দুইপাড় এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে।
মির্জাপুরের হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় নদী দখল করে ১০-১৫টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। বাসাইলে বংশাই নদীর দুপাড় দখল করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা ও রাইসমিল। লাঙ্গুলিয়া নদী পাড়ের বিশাল এলাকাজুড়ে বানানো হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। অনেক জায়গায় বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। কালিহাতীর বংশাই, সাপাই, ঝিনাই, ফটিকজানি, লাঙ্গুলিয়া ও নাংলাই নদীর দুপাড় দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি ও কারখানা। গোপালপুর উপজেলা সদরের বৈরান নদীর অস্তিত্ব এখন আর নেই। শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলদেশে বোরোর আবাদ হয়। আর পৌরসভার অংশে নদীর পাড় দখল করে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাছাড়া বাসাইলের লাঙ্গুলিয়া নদী, মধুপুরের টোকনদী, গোপালপুরের বৈরান নদী, কালিহাতীর নতুন ধলেশ্বরী, এলেংজানি, ফটিকজানি, মির্জাপুরের বংশাই এক সময় ছিল খরস্রোতা। এখন এসব নদীর অধিকাংশই পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। এসব নদীর জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি, ইটভাটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ আবাদি জমিতে পরিণত করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক নদী, খাল, বিল রয়েছে। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদী ও খাল-বিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধলেশ্বরী, নতুন ধলেশ্বরী, লৌহজং, এলেংজানি, ঝিনাই নদীতে প্রতি বছর পলি জমছে। ওই পলি কেটে নেওয়া ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নতুন ধলেশ্বরী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত অবাধ পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘বুড়িগঙ্গা নদী খনন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছে।

 
Electronic Paper