ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাংবাদিকদের ওপর চেয়ারম্যানের হামলা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
🕐 ৮:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০২২

সাংবাদিকদের ওপর চেয়ারম্যানের হামলা

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পে এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদরের আংগারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল মোল্যা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন।

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বক্তব্য আনতে গেলে আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলার সময় তিন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, মটর সাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভাংচুর করা হয়েছে এবং কালের কন্ঠের প্রতিনিধি শরিফুল আলম ইমনসহ ৫ সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকরা জানান, কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে শরীয়তপুরের কর্মরত ৫ সাংবাদিক রোববার দুপুরে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। তার কাছে ঘটনাটির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পরেন। তখন তাদের ওপর হামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হক। তারা এখন টেলি়ভিশন ও চ্যানেল টুয়ান্টিফোরের মাইক্রোফোন ছুঁড়ে মারেন, ক্যামেরা ফেলে দেন।

এ সময় প্রথম আলোর মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভেঙ্গে ফেলেন। ওই দুই ব্যক্তি সাংবাদিকদের গালাগালি দিয়ে জীবন নাশের হুমকি ও চাঁদাবাজি মামলা দেয়ার ভয় দেখান।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারই একটি ‘অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় বছরে দুই দফা ৪০ দিন করে দরিদ্র মানুষ কাজ করার সুযোগ পান। প্রল্পের শ্রমিকরা মাটি কাটা, রাস্তার ঘাস পরিস্কার, ডোবার কচুরিপনা পরিস্কারসহ বিভিন্ন কাজ করেন। এ কাজের জন্য শ্রমিকদের প্রতি দিন ৪০০ টাকা মুজরি দেয়া হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিকা প্রস্তুত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই তালিকা যাছাই-বাছাই শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ওই শ্রমিকদের বিকাশ নম্বরে কাজের টাকা পরিশোধ করা হয়। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে।

আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ জন শ্রমিক দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কার চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন। ওই ১৪ শ্রমিকের নামের তালিকায় ইউপি সদস্যর স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক মোল্যা,মেয়ে সোনিয়া বেগম,ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার,ভাই আবু সিদ্দিক মোল্যা,ছেলের শাশুরি,শ্যালিকাসহ ১১ জনের নাম রয়েছে। তাদের নামের বিকাশ নম্বরে শ্রমিকের মুজরি দেয়া হচ্ছে। কিন্ত ইউপি সদস্যর পরিবারের কেউ মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করেন না।

২০২১-২০২২ অর্থ বছরে চরচটাং গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০ জন শ্রমিকের বিপরিতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকার বিকাশ নস্বর দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন। সেই প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা ব্যায়ে একটি ধান ক্ষেতে ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

নতুন প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিক আব্দুল সরদার বলেন, আমরা ৭ জন শ্রমিক ৬ দিন কাজ করে একটি রাস্তা সংস্কার করেছি। আরেকটি রাস্তার ৯০ মিটার সংস্কার করছি। ওই দুটি রাস্তায় আমাদের ৮০ হাজার টাকা বিল দেয়া হবে। ইউপি মেম্বারের ছেলে আলিমুল চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টাকা দিচ্ছেন।

ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন। এ ছাড়া কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, নিয়ম নীতি যা আছে এটা সরকার বুঝবে এটা সাংবাদিকদের কাজ না। সাংবাদিকরা সব ধান্দাবাজ আমার জানা আছে। আপনারা কার অনুমতি নিয়ে আসছেন এখানে। এই ইউনিয়নে কোন সাংবাদিক ঢুকলে আমার অনুমতি লাগে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোন অবস্থায় এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে ইউপি মেম্বারের কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, এক ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন এমন তথ্য পেয়েছি। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 
Electronic Paper