যৌতুকের টাকা ১৮ বছর পর ফেরত দিলেন জামাতা
গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
🕐 ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৮
এক বিরল ইতিহাস বিয়ের দীর্ঘ ১৮ বছর পর শ্বশুরের হাতে যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন চার সন্তানের জনক টাঙ্গাইলের গোপালপুরের রহিম বাদশা।
জানা যায়, ২০০০ সালে আব্দুর রহিম বাদশা একই উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের নবগ্রাম দক্ষিণপাড়ার আব্দুল হালিমের মেয়ে লতা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় ছেলে এবং মেয়ের বাবা গোপনে যৌতুক হিসেবে চল্লিশ হাজার টাকা লেনদেন করেন। বিয়ের প্রায় তিন বছর পর রহিম বাদশা বিষয়টি জানতে পেরে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেভাবেই হোক এ যৌতুকের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করার।
অবশেষে দীর্ঘ ১৮ বছর পর বিয়ের সময় বরযাত্রী হিসেবে অংশ নেওয়া প্রায় সবাইকে শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত করে শ্বশুরের হাতে তুলে দিলেন যৌতুকের সেই চল্লিশ হাজার টাকা। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টিসহ প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছেন রহিম বাদশা।
রহিম বাদশা বলেন, ২০০০ সালে বেকার অবস্থায় আমি লতা বেগমকে বিয়ে করি। সে সময় আমার অজান্তে স্থানীয় ঘটকের মাধ্যমে আমার বাবা শ^শুরের কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে চল্লিশ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করি যৌতুকের এ টাকা ফেরত দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করব। পরবর্তী সময়ে বেকার জীবন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ঢাকায় গিয়ে চাকরি পাই একটি ছোটখাটো কোম্পানিতে। নিজের এবং সংসার খরচের পর উপার্জন করা সামান্য বেতন থেকে কিছুকিছু টাকা আলাদাভাবে জমাতে শুরু করি। পরে এক সময় বেতন বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশের নামকরা কোম্পানি ওয়ালটনে ড্রাইভার হিসেবে কাজ পাই। গত শুক্রবার জনসম্মুখে শ^শুরের হাতে যৌতুকের সেই চল্লিশ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে সমাজের জন্য ব্যাধি, ধর্মীয় ও সরকার কর্তৃক একটা অপরাধ বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম।
বাদশার মা বলেন, আমি চাই আর কোনো বিয়েতে যেন যৌতুকের লেনদেন না হয়। আমার ছেলে যৌতুকের ঋণ পরিশোধ করায় আমি অনেক আনন্দিত।
রহিম বাদশার শ্বশুর আব্দুল হালিম জানান, ১৮ বছর পরে হলেও মেয়ে জামাতার মধ্যে শুভবুদ্ধি উদয়সহ এমন কাণ্ডে এলাকাবাসী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। যৌতুক প্রথার অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করার এ বিরল ঘটনায় গ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সবারই উচিত রহিম বাদশার মতো সমাজের রন্ধে রন্ধে ঢুকে পড়া যৌতুকের জীবাণু ধ্বংস করা।