ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভৈরবে বঙ্গবন্ধু প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা ছিল যাদের অপরাধ

আফসার হোসেন তূর্জা, ভৈরব
🕐 ৮:৩০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২২

ভৈরবে বঙ্গবন্ধু প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা ছিল যাদের অপরাধ

ভৈরবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করা ছিল যাদের অপরাধ। শাহাদাতবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিল ২২ জন। তারা দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছিল। কিন্তু এখন তাদের খবর কেউ রাখেনা। এমনকি ১৫ আগস্ট স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের অনুষ্ঠান গুলোতে তাদেরকে দাওয়াতও দেয়না বলে তাদের অনেকেরই অভিযোগ।

দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকীর দিন ছিল। ভৈরবের তৎকালীন যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ, স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে গোপনে আলোচনা করে শাহাদাতবার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ১৫ আগস্ট তারিখে অতি গোপনে হাজী আসমত কলেজের নিউ হোস্টেলে মিলাদ, দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করে তারা।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্য ১০/১২ জন মৌলভি উপস্থিত হয়ে কোরআন খতম শুরু করেন। একজন একজন করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ২২ জন নেতাকর্মী বিকেল ৪টার মধ্য কলেজের নিউ হোস্টেলে উপস্থিত হলো। এসময় হঠাৎ করে দেখা গেল প্রায় ২৫/৩০ জন পুলিশ নিউ হোস্টেলটি ঘেরাও করে দুতলায় উঠে পরল। হোস্টেলটি ছিল দু’তলায়। এসময় পুলিশ রুমে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং রাইফেলের বাট দিয়ে প্রথমে ফখরুল আলম আক্কাছকে আঘাত করতে লাগল। আর লাঠি দিয়ে পেটাতে লাগল সবাইকে।

পুলিশ বলছিল, কুত্তার বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদের আয়োজন করেছিস, এখন জেলে যেতে হবে। তারপর মৌলভিদেরসহ ২২ জনকে থানায় নিয়ে হাজতে রাখল। তবে ভৈরব থানা থেকে মৌলভিদেরকে মুচলেকা রেখে এদিনই ছেড়ে দেয়া হয়। পরদিন থানা হাজতে থেকে তারা জানতে পারে তাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ মামলা দিয়ে তৎকালীন মহকুমা আদালতে চালান দেয়া হলো। এদিন গ্রেফতারকৃত ২২ জনের কোমড়ে রশি বেঁধে চালান করা হলো তাদেরকে। পরে আদালতে তারা জামিন চাইলে বিচারক তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিল। তারপর তারা দীর্ঘ কয়েকমাস কারাভোগ করার পর জেল থেকে ছাড়া পায়।

সেদিন যারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল তারা হলো ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমানে সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, জজ মিয়া, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মাহাবুব আলম, আসাদ মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আতাউর রহমান, ফজলুর রহমান, আসাদুল হক শিশু, আজমল ভূঁইয়া, শাহজালাল হোসেন, সুবল চন্দ্র কর, দীলিপ চন্দ্র সাহা, দীজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, রসরাজ সাহা, আবদুল হামিদ, ইদ্রিস মিয়া ও মাহবুবুর রহমান।

এবিষয়ে সেদিনের গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, আমরা সেদিন দুঃসাহসীকতার সাথে মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করেছিলাম। তিনি বলেন, এদেশে কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। আমরা ভাবতেও পারেনি মিলাদ দোয়ার জন্য গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হবে। তৎসময়ে সামরিক সরকারের নির্দেশেই আমরা ২২ জন গ্রেফতার হয়েছিলাম।

 
Electronic Paper