ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

১২ গতিরোধক যেন গলার কাটা

শাহিনুর রহমান শাহিন, সাভার (ঢাকা)
🕐 ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২২

১২ গতিরোধক যেন গলার কাটা

সড়কে দূর্ঘটনা রোধে সাধারণ গতিরোধক দেয়া হয়। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকার আশুলিয়ার জিরানী-আমতলা সড়কের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গতিরোধক নির্মাণ করায় ঘঠছে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দূর্ঘটনা, আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের। সড়ক ও জনপথ থেকে কোন রকম অনুমোদন না নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সামনে ইচ্ছামত তৈরী করেছে গতিরোধক।

সরেজমিনে আশুলিয়ার জিরানী-আমতলা সড়কের জিরানী বাজার থেকে কলেজপাড় কলাবাগান স্ট্যান্ড পর্যন্ত মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কে ১২টি গতিরোধক রয়েছে। এসব গতিরোধক বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যক্তিগতভাবেই তৈরি করা হয়েছে। জিরানী বাজার পাড় হলেই আমতলা সড়কের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মান্নানের বাড়ির সামনে সড়কে একটি, ৫০ গজ পাড় হলেই আরেকটি, চিড়িংগা পুকুরপাড়ে দুইটি, টেংগুরি দুইটি, স্প্রিং ট্রেড লিমিটেডের সামনে দুটি, ইকরা প্রিক্যডেট এন্ড হাইস্কুলের সামনে দুটি, আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান ডিগ্রী কলেজের সামনে একটি এবং কলাবাগান নিউ পপুলার হাসপাতালের সামনে একটি। এগুলোর সবকটি কোন অনুমোদন না নিয়ে এবং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ব্যক্তিগতভাবে তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, যত্রতত্র গতিরোধক স্থাপন করায় উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশী হচ্ছে। গতিরোধকের আগে-পরে নেই কোন সতর্কীকরণ চিহ্ন বা জেব্রা ক্রসিং। গতিরোধকগুলো এতো উঁচু করা হয়েছে যার কারণে গাড়ি চালানোর সময় জোরে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে প্রায়ই বাক-বিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত গতিরোধক নির্মাণের ফলে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চালকরা প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। আর পরিকল্পনা ছাড়া স্থাপন করা উঁচু উঁচু এসব গতিরোধকই পথচারীর জন্য যেন মৃতু্যফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানায়, সড়কের পাশে পাঁচ-সাতটি দোকান থাকলেই তার দুই পাশে দেয়া হয়েছে গতিরোধক। পোশাক কারখানা, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনার সামনে ইচ্ছামতো দেয়া হয়েছে গতিরোধক। রং না থাকায় গতিরোধকগুলো রাতে বোঝার কোন উপায় থাকে না। তাই ঘটে দূর্ঘটনা। টেংগুরি এলাকার স্প্রিং ট্রেড লিঃ নামের একটি কারখানার সামনে ব্যক্তিগতভাবে মূল ফটকের সামনে ইচ্ছামত দেয়া হয়েছে গতিরোধক। যা নির্মাণ করতে কোন অনুমোদন বা নিয়ম নীতি মানা হয়নি। উচু করে গতিরোধক দেয়ার কারণে ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা।

কলাবাগান এলাকায় নিউ পপুলার হাসপাতালের সামনে এর মালিক ইচ্ছামত নির্মাণ করেছে গতিরোধক। যেখানে ঘটছে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটানা।

ইকরা প্রিক্যাডেট এন্ড হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামাফিকভাবেই রাস্তার উপর নির্মাণ করেছে দুটি গতিরোধক। যেখানে কোন নিয়ম মানা হয়নি।

এছাড়াও টেংগুরি, চিড়িংগা পুকুরপাড়, মেম্বারের বাড়ির সামনে, কলেজপাড় সহ বিভিন্ন স্থানে মোট ১২ টি গতিরোধক দেয়া হয়েছে। যার কোনটিরই কোন অনুমোদন নেই।

এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা জানায়, উচু করে বিট দেয়ার কারণে অনেক সময় গাড়ি তোলা যায় না। আর বিটের বা গতিরোধকের কাছে আসলেই গাড়ি স্লো করতে হয়। যখন বিট থেকে গাড়ি নামে তখন যাত্রীরা কোমরে ব্যথা পায়। গাড়ির ক্ষতি হয়। এসব বিট দূর্ঘটনারোধ করার জন্য দিলেও ঘটছে দুর্ঘটনা।

তারা জানায়, দিনের বেলায় মোটামোটি দেখা গেলেও কোন প্রকার রং কিংবা জেব্রা ক্রসিং না দেয়ার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। যেখানে গতিরোধক দেয়া হয়েছে মূলত দুর্ঘটনা থেকে রেহায় পেতে। এছাড়া টেংগুরি, কোনাপাড়া, মরিচকাটা, কলেজপাড়, গোহাইলবাড়ি, রাঙ্গামাটি কিংবা শিমুলিয়া অঞ্চলে কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে সড়কে অতিরিক্ত গতিরোধকের কারণে ঘটনাস্থলে ফায়ারসার্ভিস পৌছাতে বিলম্ব ঘটে। যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুন বেড়ে যায়। গতিরোধকগুলো যত দ্রুত সম্ভব অপসারণের দাবী জানান তারা।

এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারম্নল ইসলাম সুরম্নজ জানান, এগুলো নির্মাণ করার সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাঁধা দিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তবে ঈদের পরে এগুলো যাতে সড়কে না থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক জানান, জিরানী-আমতলা সড়কের গতিরোধকগুলোর কোন অনুমোদন নেই। দুই বছর আগে রাতের আধারে যখন করেছে তখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছিল। গতিরোধক দিতে হলে ডিসি অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এগুলো কিছুই করা হয়নি। সম্পূর্ণ অবৈধভাবেই ব্যক্তিগতভাবে গতিরোধকগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

 
Electronic Paper