মাছে রং মিশিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে অভিনব প্রতারণা
মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ
🕐 ৫:২৬ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০২২
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া মাছের আড়ৎসহ বিভিন্ন খুচরা হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে রং মেশানো বিষাক্ত মাছ। বিলের ও নদীর মাছের মতো লোভনীয় হলুদ, বাদামি চকচকে তরতাজা দেখিয়ে চাষের মাগুর, কৈ ও শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারনত ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা। এদিকে বিদেশি এসব মাছকে দেশি বিল ও নদীর মাছ বলে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এতে ঠঁকছে ক্রেতাসাধারণ। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও তারা।
ভুলতার মর্তুজাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রিনা ইসলাম জানান, চাষের মাছের ভীরে বিলের মাছ আজকাল পাওয়া যায় না। তাই গতকাল আব্দুল হক সুপার মার্কেটের সামনে থেকে চকচকে সুন্দর লোভনীয় একেবারে অবিকল দেশী শিং ও মাগুর মাছ ৬ কেজি ক্রয় করি। সে মাছ বাড়িতে নিয়ে এসে কাটার সময় হাত রঙিন হয়ে যায়৷ পরে এসব রং দেখে হতাশ হয়ে যাই। এসব মাছের রং কৃত্রিম বুঝতে পারি।
এভাবে মধুখালী এলাকার গৃহবধু তাহছিনা নিশাত বলেন, বাজার থেকে আনা দেশী কই মাছ কাটার সময় বাদামী রং হাতে লেগে যায়৷ পরে বুঝতে পারি এসব মাছে রং দেয়া।
এ সময় তিনি দাবী করেন ক্ষতিকর রং মেশানো মাছ যাতে বাজারে বিক্রি না হয় সে ব্যপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে পদক্ষেপ নেয়ার।
সূত্র জানায়, ক্রেতারা বাজার থেকে মাছ ক্রয়ের সময় একটু খেয়াল করলেই দেখা মিলবে মাছের গায়ে লাগানো অতিরিক্ত রঙের প্রলেপ। উপজেলার গাউছিয়া মাছের আড়ৎ, আব্দুল হক সুপার মার্কেটের মাছ বাজার,তাঁত বাজার,গাউছিয়া কাঁচাবাজার, কাঞ্চন বাজার, বেলদী বাজার, ইছাপুরা ও কাঞ্চন,আতলাপুরসহ আরও বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে রং মিশ্রিত মাছ বিক্রি হচ্ছে। আবার গৃহবধূদের ধোকা দিতে একটি ফেরীওয়ালা পক্ষ পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিক্রি করছে এসব মাছ। এতে প্রতারিত হচ্ছে গ্রাহকরা।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজমুল আহমেদ বলেন, একটি পক্ষ কৈ, মাগুর ও শিং মাছে রং দিয়ে তা আকর্ষণীয় করে দেশী মাছ বলে বিক্রি করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকী। কারন এসব রং ধোয়ার পরও থেকে চামড়ায় লেগে থাকে। এমনকি রান্না করলেও রংয়ের বিষাক্ততা থাকতে পারে৷ ফলে এসব মাছ খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, এ ধরনের প্রতারনার কারনে ভোক্তা অধিকার নষ্ট হচ্ছে৷ এ ধরনের ব্যবসায়ীদের আইনের আঁওতায় আনা হবে।
এদিকে রং দেয়ার কারণ জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা আলাল বলেন, রং দিলে মাছ একটু ভালো ও দেশী মাছের মতো দেখায়। ক্রেতারাও বেশি দামে প্রচুর মাছ কেনেন। তাই হয়তো অল্প পরিমাণে রং দিয়ে মাছ বিক্রি করছে সবাই। এতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না বলে দাবি করেন তারা।
মনির হোসেন রং দেওয়া মাছের একজন ক্রেতা জানান, বাজারে এসে যেই মাছ সতেজ ও টাটকা দেখায় সেই মাছই কিনি। মাছে যে রং মেশানো হয় তা তো জানতাম না। তাজা ও দেশী মাগুর মাছ অনেক কাল দেখিনি। হঠাৎ বাজাবে দেখে যা চেয়েছে তাই, সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে তো আরও ক্ষতি হচ্ছে তাহলে। রং মিশিয়ে যারা ক্রেতাদের ঠকায় তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমরান জানান, মাছে রং দেয়া আইনত অপরাধ। এ বিষয়ে পর্যাক্রমে বিভিন্ন মাছের বাজার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।