কৃষি জমির মাটি কেটে সড়ক সংস্কার
সিরাজুল ইসলাম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
🕐 ৫:১৫ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০২২
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার এলজিইডির রাস্তা সংস্কারের কাজে কৃষকদের ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ইমতিয়াজ আসিফ এবং এম এ ইন্জিনিয়ারিং জেবি এর বিরুদ্ধে। রাস্তার দুইপাশের ফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ার অনুমতি না থাকলেও এস্কেবিউটর (ভেকো) মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে খনন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা।
সরেজমিনে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুন ব্রীজ থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত ৮৮৬০ মিটার বা প্রায় সারে আট কিলোমিটার সড়কটি এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। রাস্তার পাশ থেকে মাটি নিয়ে বা রাস্তার পাশে মাটি না থাকলে অন্য স্থান থেকে মাটি এনে কাজ করতে হবে, এমন চুক্তি আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এলজিইডির। কিন্তু তারা শুধু স্থানীয় কৃষকদের ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে এস্কেভেটর (ভেকো) মেশিন দিয়ে সরু গভীর করে মাটি কেটে রাস্তা বর্ধিত করছেন ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা। এতে রাস্তার দুপাশে পানিতে ভরে পুকুরের সৃষ্টি হয়েছে। এতে তার পাশের কৃষি জমি চাষেও ভেঙে যাওয়ার আতংক দেখা দিয়াছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সহজ সরল গ্রামের কৃষকরা তাদের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা দিলে কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে উল্টো হুমকি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সড়কে দুইপাশ সরু গভীর হওয়ায় সড়কটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে এবং ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চাষযোগ্য পাশের জমিও।
শাহাজদ্দি মাতবর পাড়ার কৃষক আয়নাল শেখ জানান, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই রাস্তা চাই। কিন্তু আমাদের, ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট করে মাটি কেটে রাস্তার দুইপাশে ভরাট করা হচ্ছে। বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন হুমকিও দিচ্ছেন।
একই এলাকার মান্নান, জোসনা বেগম, ইউনুস সহ আরও অনেকেই জানান, ঠিকাদার খুবই প্রভাবশালী। আমরা কিছু বললে মোটর সাইকেল নিয়ে কিছু ছেলেরা এসে হুমকি ধামকি দেয়। তাছাড়া অফিসে জানালে তারা জানান এভাবেই কাজের সিডিউল আছে। তারা জানান আমরা গরীব কৃষক কারো কারো জমি লম্বালম্বি ভাবে আছে তাদের পুরো জমিতেই খাল কাটা হয়েছে। এর ফলে ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। গর্ত করার ফলে উপরের অংশও ঝুকিতে রয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় এস্কিবিউটার মেশিন দিয়ে বাদাম খেতে মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। পাশে দাড়িয়ে আছে ভূক্তভোগি কৃষক লালন বলেন জোর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছু বললে প্রশাসনের ভয় দেখায়। বলে বাড়ি থাকলে বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে। আমরা নিরুপায়। এ ছাড়া হামিদ মেম্বারের হাটের রাস্তায় দেখা যায় মাটি কাটার ফলে সেখানে বিশাল পুকুরের মতো তৈরি হয়েছে। ভুক্তভোগি জোসনা বেগম বলেন লম্বালম্বি এই পুরো জমি আমাদের। আমরা বলেছিলাম এক জায়গা থেকে মাটি নেওয়ার জন্য পুকুর হলেও বাকি যায়গা চাষাবাদ করা যেত কিন্তু উনারা কোন কথাই শুনছে না।
সেখানে দায়িত্বরত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিজু বলেন আমাদের কিছুই করার নেই। এভাবেই আমাদের সিডিউল আছে। পুকুর হোক আর জমি নষ্ট হোক আমরা কাজ চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন নিউজ করতে চাইলে অফিস থেকে যেন নিতে। এবং তিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রধান ক্ষমতা শালী সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বললে তিনি জানান এভাবেই সিডিউল আছে ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ সম্পর্কে বললে বলেন একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা খুব দ্রত কাজ শেষ করে ফেলবো।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব রহমান মন্ডল বলেন আসলে কাজটি অনেক আগের তখন রেট কম ছিল এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চাইছে না। অনেক বলে কইয়ে কাজ করানো হচ্ছে। মানুষের ফসলের ক্ষতি প্রসংগে বলেন রাস্তাটি আমার ইউনিয়নের খুব দরকার।
গোয়ালন্দ সহকারী এলজিআরডি সহকারী প্রকৌশলী গন্জুর আলী জানান আসলে আমাদের রাস্তা করার জন্য সরকারি জমি অধিগ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। তাই এ সকল রাস্তা সাধারণত পাশ থেকে মাটি কেটেই করা হয় তবে যেখানে পাশ থেকে মাটি কাটার কোন ব্যাবস্থা থাকে না তখন বাইরে থেকে মাটি আনার নিয়ম রয়েছে। যেহেতু রাস্তার দুই পাশেই বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে তাই স্থাপনা ক্ষতি করার সুযোগ নেই।