ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট

দিনে ক্ষতি শত কোটি টাকা

ফেনী প্রতিনিধি
🕐 ৩:২৬ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০১৮

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের ফেনী বাইপাস অংশের ফতেহপুরে নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে সৃষ্ট যানজটে প্রতিদিন কোটি টাকার বাণিজ্যিক ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ৬-৭ ঘণ্টার ক্ষেত্রে ১৫-১৬ ঘণ্টা এমনকি কোনো কোনো সময় তা ২০ ঘণ্টাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ফেনী শহরের মহিপাল থেকে ফতেহপুর কিংবা মোহাম্মদ আলী থেকে মহিপাল ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিতে ৩-৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। এতে করে কেবল যাত্রীদের কর্মঘণ্টাই নষ্ট নয়, কোটি টাকার লোকসানও গুনছেন পরিবহন মালিকরাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শিপো পিবিএল ওভারপাসটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। একপর্যায়ে চাঁদাবাজির কারণে তারা কাজটি শেষ না করে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনী ওভারপাসটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়। ৬০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওভারপাসটি চালু হলে রাজধানী ঢাকা আর বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গাড়িগুলো দ্রুত গন্তব্যে চলে যেতে পারবে। শহরের মহিপালে নির্মিত দেশের বৃহৎ ছয় লেনের ফ্লাইওভারেরও সুফল মিলবে। ওভারপাস নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি মহাসড়ক যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। এতে করে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের অন্তহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি কাঁচামালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষতি মুখে পড়তে হচ্ছে।
যদিও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওভারপাসের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে বলেছিলেন, ওভারপাসটির কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। মে মাসে এটি অর্ধেক বা দুই লেন খুলে দেওয়া হবে। তখন যানজট কমে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ফতেহপুরে আটকে থাকা ঢাকাগামী কভার্ডভ্যানের চালক নাজমুল ইমন জানান, চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৮টায় মহিপাল পৌঁছেছি। মহিপাল থেকে ফতেহপুর পৌঁছতে ছয় ঘণ্টা সময় লেগেছে। এর আগে কয়েকদিন চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলো কুমিল্লা দিয়ে লাকসাম, সোনাইমুড়ী হয়ে চৌমুহনী দিয়ে মহিপাল পার হয়েছে। এতে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তেমনি পরিবহন মালিকরাও আর্থিক ক্ষতির মখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের মহাসচিব আবু মোজাফফর জানান, ফতেহপুুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে কাঁচামাল পৌঁছতে দেরি হয়। ঢাকা থেকে শিল্প পণ্যও চট্টগ্রাম বন্দরে সময়মতো পৌঁছানো যায় না। কোনো দিন ৫-৬ ঘণ্টার পথে পুরো দিনও কেটে যায়।
ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম নবী জানান, ফেনী থেকে ঢাকা রুটে বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ শত শত গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ির মালিককে দৈনিক অন্তত পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান একেএম সাহেদ রেজা শিমুল জানান, ভয়াবহ যানজটের কথা শুনে তিনি ফেনী আসতে রেলের টিকিট কেটেছেন। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ না করা গেলেও যানজটের ফলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
মহাসড়কে প্রতিনিয়ত পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে রাজধানীর এহসান গ্রুপ। কোম্পানির পরিচালক মো. এনামুল হক জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়িভাড়া ১৫-২০ হাজার টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে ২৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার ভোর ৪টায় ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে রওনা হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় গাড়িটি বন্দরে পৌঁছেছে।
এদিকেও ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, বিকল্প সড়ক না করে ওভারপাস নির্মাণ কাজ করা যানজটের প্রধান কারণ। এছাড়া বিকল্প সড়ক পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি ব্যবহার করলেও বর্তমানে সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে ওই সড়ক দিয়েও যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

 
Electronic Paper