সন্তান না হওয়ায় অন্যের শিশু চুরি
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার
এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
সন্তান না হওয়ার কারণে অন্যনের শিশু চুরি করে লালন পালন করার জন্য হাসপাতাল থেকে দুটি শিশু চুরি করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে আলপনা খাতুন। এই ঘটনায় মৃত শিশুর বাবা চয়ন তালুকদার বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় ২০১২ সালের মানব পাচার দমন আইনের ১০ (২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করে।
আটককৃতরা হলো- সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া গ্রামের মৃত সোলায়মান হোসেনের স্ত্রী সয়রন বিবি, তার মেয়ে আলপনা খাতুন, ছেলে রবিউল ইসলাম, রবিউলের স্ত্রী ময়না খাতুন, একই গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মিনা খাতুন ও একই গ্রামের রেজাউলের স্ত্রী খাদিজা খাতুন ও গ্রাম ডাক্তার শরিফুল ইসলামসহ ৮ জন।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সদর থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম (বিপিএম) এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ৭ বছর পূর্বে আলপনা খাতুনের বিবাহ হয়। বিয়ে অনেক দিন পার হলেও কোন সন্তান না হওয়ায় স্বামী সংসারে নানা নির্যাতন পোহাতে হয় তার। এই জন্য পরে স্বামীর বাড়িতে বলে আমার পেটে বাচ্চা। সেই কারণে নিজে পরিকল্পনা করে শ্বশুর বাড়ী ছেড়ে বাবার বাড়িতে আসে। বাবার বাড়ী থেকে মাঝে মাঝে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে আসা-যাওয়া করে। এরই সুবাধে হাসপাতালের এক কর্মচারীর সাথে সক্ষতা গড়ে তোলে এবং মোবাইলে বিভিন্ন সময় কথা বলে শিশু চুরির বিষয়ে টাকা পয়সার লেন দেন করে।
সেই পরিকল্পনা মাফিক গত (২৩ ফেব্রুয়ারী) সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল থেকে ২৩ দিনের বাচ্চা (মাহিম) ও গত শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে সলঙ্গা থানার সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে জন্মের ৭ ঘণ্টা পর (সামিউল) নামের আরেক বাচ্চা চুরি করে। পরে শিশু দুটিকে আলপনা তার বাবার বাড়ী সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া গ্রামে নিয়ে যায়।
সেখানে তার মা, চাচী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীসহ প্রতিবেশীদের জানাই এটি তারই সন্তান। শিশু আলপনার হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার বাবার বাড়ীর সদস্যরা দেখাশোনা করে। পরের দিন শিশু (মাহিম) অসুস্থ হলে তারা নিকটবর্তী পল্লী চিকিৎসক মো. শরিফুলের নিকট নিয়ে যায় এবং শরিফুল শিশুটির দেহে ইনজেকশন দেয়। কিছুক্ষণ পরে শিশু মাহিম মারা যায়।
পরে আলপনা মৃত দেহ ঘরের রক্ষিত ধানের গোলায় লুকিয়ে রাখে। এরপর আলপনা বোরকা পড়ে আবারো (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে (সামিউল) নামের জন্মের ৭ ঘণ্টা পর আরেকটি শিশু চুরি করে।
তিনি আরো জানান, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা সদর থানা পুলিশ, সলঙ্গা থানা, র্যাব-১২, ডিবির সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন স্থানের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে যোগাযোগ শুরু করি। সিসি ফুটেজের নমুনা দেখে আমরা সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া গ্রামে অভিযান চালায়।
এ সময় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) রাতে সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া এলাকা অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া দুই শিশুর মধ্যে মাহিম কে মৃত এবং সামিউলকে জীবতি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ঘটনার সাথে জড়িত চোর চক্রের ৫ জন নারী এবং ৩ জন পুরুষ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতাল ২৩ দিন বয়সী এক বাচ্চা ও শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে সলঙ্গা থানার সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে জন্মের ৭ ঘণ্টা পর আরেক বাচ্চা চুরি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোছা. ফারহানা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শরাফত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল স্নিগ্ধ আক্তার, সদর থানার ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকীসহ জেলার অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।