চসিক নির্বাচন ঘিরে অভিযোগের পাহাড়
চট্টগ্রাম ব্যুরো
🕐 ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর আচরণবিধি ভঙ্গ, হামলা-হুমকিসহ ৫৬টি অভিযোগ জমা হয়েছে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চসিক নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর আচরণবিধি ভঙ্গ, হামলা-হুমকিসহ গত শনিবার পর্যন্ত ৫৬টি অভিযোগ জমা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ১২টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তিনটি অভিযোগ। বাকি ৪১টি অভিযোগ নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের। এর মধ্যে বিএনপি প্রার্থীর ১২টি অভিযোগের তিনটির কোনো সত্যতা পায়নি নির্বাচন কমিশন ও তদন্তকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটটি অভিযোগের কোনো ফলাফল জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। শুধু একটি অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের নির্বাচনী বিধিমালা মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। যদিও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও নানা কাগুজে তথ্য বলছে অন্য কথা। অনেকেই মানেননি নির্বাচনী বিধিনিষেধ।
এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘যদি কোনো ফৌজদারি কর্মকা- হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সুযোগে কেউ যেন হয়রানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি।’ পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে, বিএনপির এ অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। নির্বাচন পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত যা আছে তা নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।’
পণ্য পরিবহনকারী বিশাল ট্রেইলার গাড়িকে মঞ্চ বানিয়ে আগে-পিছে মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর সমর্থনে প্রচারণা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রচারণায় অংশ নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। গত শনিবার নগরের লালখানবাজারের ইস্পাহানী মোড় থেকে শুরু হওয়া এ প্রচারণার গাড়িবহর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তাদের গাড়িবহরের কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
এর আগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের ডেকে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য নগরবাসীর কাছে ভোট চেয়েছেন সরকারি পদে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ২০ জানুয়ারি মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদত হোসেনের পক্ষে চট্টগ্রাম নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক একরামুল করিম অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের (প্রেসিডিয়াম মেম্বার) সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের স্বাক্ষরে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দল-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা ছাপানো হয়েছে, যা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিধিমালার লঙ্ঘন।’
এর আগে নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিন (৮ জানুয়ারি) দক্ষিণ পাহাড়তলীতে গাড়িবহর নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারণা ও ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে পথসভার ঘটনায় ছবিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়। গত ১২ জানুয়ারি এ নিয়ে অভিযোগ করে বিএনপি। ইসি বলছে, তদন্ত করে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলেও দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, যানজটের কারণে রেজাউল করিম চৌধুরীর পেছনের গাড়িগুলোকে তার বহরের গাড়ি মনে হয়েছে।
গত ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য নগরবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ভোট প্রার্থনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়র কারও পক্ষে ভোট চাইতে পারেন না। প্রশাসকের বিষয়ে বিধিতে কী বলা আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি বিধি অনুযায়ী তিনি ভোট চাইতে না পারেন তাহলে তাকে এ বিষয়ে নিষেধ করা হবে।’
সর্বশেষ গত শনিবার ট্রেইলার গাড়ি, মোটরসাইকেলযোগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালায় ছাত্রলীগ। প্রচারণায় অংশ নেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারণায় গাড়িবহর ও শোডাউন নিষিদ্ধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন বিকেলে বিশাল একটি খোলা ট্রেইলার ডেকোরেশনের কাপড় দিয়ে সাজিয়ে বানানো হয় ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ। এর সামনে ছিল অন্তত শ’খানেক মোটরসাইকেল। পেছনে ছিল আরও ২৫টি পিকআপ ভ্যান। এর পেছনে আরও কিছু মোটরসাইকেল। ধীরগতিতে চলা গাড়িবহরের সঙ্গে হেঁটে অংশ নেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। ট্রেইলারে ছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা। এই গাড়িবহরের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকেও।
এ বিষয়ে জানতে রোববার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ কারণে আপনি আমাকে মিটিংয়ের মাঝখানে ফোন করেছেন?’ পরে মিটিংয়ে আছি বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। মেয়র প্রার্থীর মতো কাউন্সিলরদের অভিযোগেরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তারা। শনিবার পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মোট ৪১টি অভিযোগের ১৩টি ঘটনার কোনো ফলাফল জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে দুই প্রার্থীকে। আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে ডেকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে করা হয়েছে সতর্ক। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারী প্রার্থীর পোস্টার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।