ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেনায় জেরবার চসিক

আরিচ মাহমুদ, চট্টগ্রাম
🕐 ১১:১২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৪, ২০২০

দেনার ভারে ডুবুডুবু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বিভিন্ন খাতে সিটি করপোরেশনের দেনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। শুধু ঠিকাদাররাই পাবেন ৮৫৫ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ১৭ কোটি টাকা। দেনার এই বিশাল অঙ্ক ভাবিয়ে তুলেছে চসিক প্রশাসককেও। তার মতে, শুধু ঠিকাদারদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে করপোরেশন। এদিকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন, গ্র্যাচুইটিসহ বিভিন্ন তহবিলেও রয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকার বকেয়া। আয়বর্ধক প্রকল্প একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়া, নতুন কোনো আয়বর্ধক প্রকল্প চালু না হওয়া, অনিয়ম-দুর্নীতি ও আমলাদের অসহযোগিতাসহ নানা কারণে দেনাদায় বেড়েই চলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, সদ্য ক্ষমতা ছেড়েছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি সিটি করপোরেশনের আগের মেয়রদের পথ ধরেই হেঁটেছেন। তার বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে বর্তমান চসিক প্রশাসক কাজ করছেন। এর আগে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম প্রায় ৩০০ কোটি টাকা দেনা রেখে মেয়র পদ ছাড়েন। তার আগে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ৬০ কোটি টাকার দেনা রেখে যান। বর্তমান মেয়র নাছির উদ্দীনের গত পাঁচ বছরে সেই দেনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

চসিক তথ্য মতে, বিভিন্ন খাতে করপোরেশনের দেনার মধ্যে নগরীতে উন্নয়ন কাজের বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা রয়েছে প্রায় ৮৫৫ কোটি টাকা। ১১ মার্চ ১৯৯৪ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সাল পর্যন্ত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময় ৬০ লাখ টাকা দেনা রেখে যান। ২০ জুলাই ২০১০ থেকে ২৭ মে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি সমর্থিত মেয়র এম মনজুর আলমের সময় চসিকের দেনা ছিল ২৯৫ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ টাকা। এদিকে বর্তমানে চসিকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও গ্র্যাচুইটি তহবিলেও বিশাল অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। এ তহবিলসহ আরও বেশ কয়েকটি তহবিল মিলে বকেয়ার পরিমাণ এখন ৯০ কোটি টাকার মতো।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কাজ করে বছরের পর বছর বিল না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার সমিতি। দীর্ঘ সময় পাওনা টাকা না পেয়ে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া হয়ে গেছেন বলে জানান তারা। অনেকে ব্যাংক ঋণের দেনা মেটাতে না পেরে এ পেশা ছেড়ে অন্যপথে পা বাড়িয়েছেন। কেউ কেউ টাকার অভাবে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়ে মারা গেছেন।

সিটি করপোরেশন ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মনজুরুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র মনজুর আলমের শাসনামলের টাইগারপাসের একটি ভবন নির্মাণ কাজের বিপরীতে তিন কোটি টাকা এখনো পরিশোধ করেনি সিটি করপোরেশন। দীর্ঘ সময় থেকে বর্তমান সিটি করপোরেশন থেকে পাওনা আট কোটি টাকা। এ দীর্ঘ সময়ে বখেয়া টাকার জন্য সর্বোচ্চ সস্থানে তদবির করেও কোনো সুফল মেলেনি। যদিও নির্মাণাধীন ভবনে এখন সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন টাকা না দিয়ে কাজ আদায় করে নিচ্ছে। এদিকে বকেয়া টাকার জন্য কথা বলেও সুফল মিলছে না।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবির বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা না থাকার কারণে এসব হয়েছে। ঠিকাদার কাজ শেষ হলে বিল পাবে এটাই তো নিয়ম। বছরের পর বছর ঘুরে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন তারা। নগরীতে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। স্পন্সর নিয়ে এসব কাজ হলেও অপচয় অনিয়ম বেশি হয়েছে। একশো টাকার পণ্য এক হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছে। অভিজ্ঞতা নেই এমন লোকগুলো দরপত্র নিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে হাত বদল করে বিক্রি করেছে। এতে ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি অন্য পেশার লোকদের ঠিকাদারি তকমা লাগিয়ে ব্যবসায়ীতে পরিণত করেছেন। শরীরে ক্ষতস্থানে মলম না দিয়ে রোড ও আইল্যান্ডে রূপচর্চা ও বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না বলে মন্তব্য করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন জানান, ঠিকাদারদের বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ করতে গেলে করপোরেশন বন্ধ করে দিতে হবে। করপোরেশনের ১২শ কোটি টাকা দেনার মধ্যে ঠিকাদারদের পাওনা আছে ৮৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১৭ কোটি টাকা। শুধু ঠিকাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে গেলে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে না।

 
Electronic Paper