পাহাড়ে দুলছে জুম
শান্তিময় চাকমা, রাঙ্গামাটি
🕐 ২:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২০
তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ের পাদদশে বাতাসে দুলছে ঝুম। ইতোমধ্যে আদিবাসী জুমিয়ারা জুম কাটা প্রায় শতভাগ শেষ করে ফেলেছেন। জুম চাষিরা এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় খুশিতে আত্মহারা। পর্যাপ্ত ও সময়মত বৃষ্টিপাত এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে এ বছর ভালো ফলন হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো জুমের নতুন জাত চাষ করা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৪৮, ৮২ ও ৮৫ এবং বিনা-১৭ এবং ১৯ ধান চাষ করায় ফলন বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
রাঙ্গামাটিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টরে জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবানে নয় হাজার ২০ হেক্টর, রাঙ্গামাটিতে ছয় হাজার ৫১০ ও খাগড়াছড়িতে দুই ২৫০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৬৭৩ হেক্টর বেশি এলাকায় জুম চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে গড়ে দুই টন। যা গত দুই বছরে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল গড়ে ১.৭৫ টন। গত বছর তিন জেলায় চাষাবাদ ছিল ১৭ হাজার ১০৭ হেক্টর।
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে জুমের চাষাবাদ তুলনামূলকভাবে কমে গিয়েছিল। তখন জুম চাষে আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় জুমিয়ারা অন্যান্য ফসল ও সবিজি চাষে ঝুঁকে পড়েছিল। তবে এ বছর জুমিয়াদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগ উচ্চ ফলনশীল জুম চাষে উদ্বুদ্ধ করায় ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান।
জুমিয়ারা সেই ঐতিহ্যবাহী নিয়মে শুকর ও মুরগি জবাই করে ‘ধান ফাঙ’ (ফসল তোলার আনুষ্ঠানিকতা) করে জুম কাটা শুরু করে দেয়। দীর্ঘ ছয় মাস কঠোর পরিশ্রম ও অপেক্ষার পর জুম চাষিরা ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুম কাটা শুরু করে পুরো কার্তিক মাস পর্যন্ত ধান তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে।
জুম চাষ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পেশা এবং জীবিকার অন্যতম উৎস। আদিবাসীদের মধ্যে চাকমা, মারমা, তংচঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, বম, ম্রো, খিয়াং ও লুসাই সেই স্মরণাতীত কাল থেকেই জুম চাষ করে আসছে বলে জানা যায়।
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে কৃষক রামলাই পাংখোয়া বলেন, নতুন জাতের ধান চাষ, সময়মত, সঠিক বৃষ্টিপাত এবং আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এবার জুমের ফসল ভালো হয়েছে। রাঙ্গামাটির বরকলের বড়হরিণায় কৃষক ধন কুমার চাকমা জানিয়েছেন, এ বছর তার দুই একর জমিতে জুমের ভালো হয়েছে।
রাঙ্গামাটি বরকল উপজেলার বড়হরিণা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নীলাময় চাকমা বলেছেন, তার ইউনিয়নে এ বছর জুম ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, এ বছর উন্নত জাতের জুম চাষ, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ও সঠিক বৃষ্টিপাতের ফলে ফলন ভালো হয়েছে। জুম চাষের আদি পদ্ধতিকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি কৃষকদের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে জুম চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।