ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কক্সবাজারে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা

মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
🕐 ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২০

কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চলছে। সরকারি প্রকল্প দেখিয়ে জেলার রামু উপজেলা ও কক্সবাজার সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে হরদম পাহাড় কাটা। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপিসদস্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের ছত্রছায়ায় কাজ করছে বেশ কিছু স্থানীয় লাঠিয়াল বাহিনী।

এদিকে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরদারি না থাকায় পাহাড় খেকোরা আরো বেপরোয়া হয়ে সদরের উসলামপুর হয়ে রামুর জোয়ারিয়ানালা রশিদনগরসহ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটেই চলেছে। গভীর রাত এমনকি দিন-দুপুরেও পৃথক পৃথক স্থানে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ভুমিদস্যুরা ও পাহাড় খেকোরা। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে চলছে পাহাড় কাটার উৎসব। তবে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে আটকসহ জরিমানা করা হলেও তারপরেও থেমেনি এ পাহাড় কাটা। রেলের রাস্তা নির্মাণের নাম ব্যবহার করে এবং চলমান বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভরাট কাজে ২০/২৫ টি ডাম্পার লাগিয়ে রামুর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হরদম মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালী বিশাল সিন্ডিকেট। সরকার দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দৈনিক কোটি টাকার পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে এ সিন্ডিকেট।

উন্নয়ন প্রকল্পে মাটি ভরাটের নাম করে জোয়ারিয়া নালা, রশিদ নগর চাকমারকুল, রাজারকুল, ফতেখারকুল ইউনিয়ন যেন বিরাণভূমি। প্রতিদিন ২৫/৩০টির মত ডাম্পার অর্ধশত স্পট থেকে মাটি কেটে পরিবেশ ধংস করছে যার নেতৃত্বে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। ১০টি পয়েন্টে পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে।

সরেজমিনে দেখা যায়- জোয়ারিয়ানালার সিকদারপাড়া, আশকরখিল, মহিষকুম, মোরাপাড়া, ফরেষ্ট রোড,মাদ্রাসা গেইট, ছাগইল্ল্যাকাটায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে শাহ আলম, মোঃ ইউনুচ, মিজানুর রহমান, আবদু শুক্কুরসহ ৭ জন। জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পাশে নদীতে ৫টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী পুতু সওদাগর, সালেহ আহমদসহ প্রভাবশালী ২ জন নেতা। তারা সকলে দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাদের সামনে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। ফলে তারা নির্বিচারে পাহাড় কাটছে বিনা বাধায়। তাদের মাটি বিক্রির কারণে পাহাড়ে বসবাসরত অনেক অসহায় পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে।

রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মধ্যম নোনাছড়ি এলাকায় পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানায়, ওই এলাকার সৌদি প্রবাসী বশির আহমদের স্ত্রী নুর নাহার বেগম ৫/৬ মাসপূর্বে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড়ি জমি ক্রয় করেন। ক্রয় করার পর থেকে নুর নাহার বেগম নির্বিচারে সেই পাহাড় কাটা শুরু করেন। সম্প্রতি পাহাড় কেটে সেখানে একটি বসতঘর তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও দিনে রাতে জেয়ারিয়ানালার মহিষকুম, আশকরখিল, রশিদনগরের কানচিরাঘোনা, লাইল্যাঘোনা, কালিরছড়া, মোরাপাড়া, চাকমারকুল, রাজারকুল এবং ফতেখারকুল ইউনিয়নের কলঘর বাজারের উত্তরে নতুন ব্রীজের পশ্চিমে বাঁকখালীর প্রায় ১ কিলোমিটার নদীর পাড়, নতুন চরপাড়া, শ্রীমুরা, শাহমদের পাড়া, মোহাম্মদপুরা, রউর ঘোনা, রাজারকুল সিকদারপাড়া, পশ্চিম মেরংলোয়াসহ ৫০টি স্পট থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে উক্ত মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

রশিদ নগর ইউনিয়নে ৮ জনের একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে রশিদ নগরের কানচিরাঘোনা ও লুইল্যাঘোনা পাহাড় এলাকায়।
এদিকে কিছুদিন আগে কক্সবাজার জেলায় হঠাৎ করে পাহাড় কাটা বেড়ে যাওয়ায় এবং পাহাড় কাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ( বেলা)। একই সাথে দ্রুত সময়ে পাহাড় কাটা বন্ধ ও পাহাড়ে নির্মিত সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে অনুরোধ জানিয়ে ৭ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রসহ ২২ সরকারী কর্মকর্তাকে আইনী চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

এদিকে গত ৯ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জানানো হয়, সারা দেশের মধ্যে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি, ৫৯ হাজার ৪৭১ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। সারা দেশে দখল হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার একর।পাহাড় কাটার এ উৎসব শুরু হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘুমধুম রেললাইনকে কেন্দ্র করে। রেললাইনের গতিপথে পাহাড় পড়লে তা নির্ধারিত পরিমাপে কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ সুযোগে যে যেমন পারছে, পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির পাশাপাশি জমি সমতল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে।

 
Electronic Paper