ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘কেউ কথা রাখেনি’

তানজেরুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন রাফি, লক্ষ্মীপুর
🕐 ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২০

তিন যুগের ইতিহাস। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসে, আর শোনা যায় প্রতিশ্রুতি। লক্ষ্মীপুরের মেঘনাতীরের রামগতি-কমলনগরবাসী শোনেন, আশ^স্ত হন, আশায় বুক বাঁধেন। ফের আশাহত হন। এভাবে পেরিয়েছে ৩৬ বছর। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে দুই উপজেলার কয়েকশ’ পরিবারকে হতে হয়েছে নিঃস্ব, ঠাঁই হয়েছে রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশে। মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, বসতঘরসহ সরকারি ও বেরসরকারি বহু স্থাপনা। সর্বনাশা মেঘনা গিলে খেয়েছে শত শত কিলোমিটার সড়ক। অথচ আঁতুরঘরেই বারবার মৃত্যু হয়েছে ‘মেঘনা তীর রক্ষা বাঁধ’ নির্মাণের কর্মপরিকল্পনা।

মেঘনা নদীপাড়ের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ইউপি সদস্য পর্যন্ত কেউই নির্বাচনে বিজয়ের পর মনে রাখেননি প্রতিশ্রুতি। নদীভাঙন রোধে প্রকল্প অনুমোদনে দৌড়ঝাঁপ দূরের কথা, আখের গোছাতেই ব্যস্ত থেকেছেন তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বিজীয় হয়েছেন। তবে তিনি অধিকাংশ সময় ঢাকা শহরে থাকেন। নদী ভাঙন রোধে তার কী আসে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রামগতি উপজেলার বড়খেরী, চরআলগী ও কমলনগর উপজেলার ফলকন, চরলরেন্স, পাটোয়ারীরহাট, সাহেবেরহাট এলাকায় মেঘনা নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিগত দিনে মেঘনার বুকে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, বসতঘর, সরকারি ও বেরসরকারি বহু স্থাপনা। সর্বনাশা মেঘনা গিলে খেয়েছে শত শত কিলোমিটার সড়ক। বর্তমানে কমলনগর উপজেলার নাছিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ, লুধুয়া ও রামগতি উপজেলার জনতাবাজার, মেস্ত্রী পাড়া ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। এসব এলাকার বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

জানা গেছে, বিগত দিনে মেঘনা নদীভাঙন রোধে ১৩৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে প্রথম পর্যায়ে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ নির্মিত হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজের বরাদ্দ জোটেনি। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর সফরে এসে নদীভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন। এতে স্বস্তি ফিরে আসে নদী ভাঙা মানুষের হৃদয়ে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি সংশ্লিষ্টরা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক মেঘনা নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি জানিয়েছেন ‘প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প প্রণয়ন কাজ চলমান আছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু আক্ষেপ করে বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশে বিকল্প ধারার প্রার্থীর জন্য দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে হয়েছে। অথচ নির্বাচিত হয়ে তিনি ভোটারদের খোঁজ নেন না। অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকেন। এখন আবার করোনার ভয়ে তিনি এলাকায় আসেন না। অথচ নদীভাঙন এলাকার মানুষের কাছে জবাবদিহি আমাকেই করতে হচ্ছে। কেননা ভোটের আগে তাদের আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানান, গত ৭ অক্টোবর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মেঘনা নদীভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প-বিষয়ক আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটি অনুমোদনের পর্যায়ে যাবে। গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা স্বল্প বাজেটে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে উত্তাল মেঘনায় স্থায়ীভাবে ব্লকের কাজ না করলে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক লক্ষ্মীপুরে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙন রোধে একটি মেগা প্রকল্প প্রণয়ন কাজ চলছে। কম ব্যয়ে অধীক টেকসই বাঁধ কিভাবে নির্মাণ করা যায় সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নদীর বর্তমান অবস্থা, পানির গভীরতা, স্রোত, আবহাওয়া সবকিছুই বিবেচনা করতে হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই লক্ষ্মীপুরবাসী সুখবর পাবে।

 
Electronic Paper