হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পর
ইকবাল হোসেন সুমন, নোয়াখালী
🕐 ২:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৫, ২০২০
হারিয়ে যাওয়ার ২০ বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে গেল সেই আসমা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট আসমা জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে দীর্ঘদিন পর নিজের পরিবার তথা মা-বাবা, ভাই-বোনের কাছে ফিরে গেছেন। পরিবারের এই মিলনের সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে নোয়াখালী পৌরসভার কনভেনশন হলে এক আনুষ্ঠানিক পুনরেকত্রীকরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জোহরা খাতুন আসমাকে তার মা, ভাই ও বোনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আসমার আশ্রয়দাতা লালন-পালনকারী ফাতেমা জোহরা সীমা, মনোয়ারা বেগম, জেলা টেলিফোন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলু, ইউএনবি নোয়াখালী প্রতিনিধি মেজবাহ উল হক মিঠুসহ উপস্থিত অতিথিরা আসমাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন। সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল, বিশেষ অতিথি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, আসমার আশ্রয়দাতা লালন-পালনকারী ফাতেমা জোহরা সীমা প্রমুখ।
হারিয়ে যাওয়া আসমা উপাখ্যান -
আজ থেকে ২০ বছর আগে ২০০১ সালে চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়া আসমা নামের শিশুকে এক পরিবার বাসায় কাজ করাতে পথ থেকে নিয়ে যায়। একদিন মারধর করলে সে আবার পথে বেরিয়ে পড়ে।
পরে নোয়াখালীর জনৈকা ফেরদৌসী কান্নারত আসমাকে কয়েকদিন নিজের হেফাজতে রাখেন। কিন্তু কেউ খোঁজখবর করছে না দেখে তিনি আসমাকে নিয়ে আসেন নিজের এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর গ্রামে।
তারপর নিয়তি তাকে বিভিন্ন জায়গায় টেনে নিয়েছে। পাঁচ বছর ছিল নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এরপর আরও দুই বাসায় ছয় বছর থেকে পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায় ফিরে আসে। ফরহাদ কিসলুর সহধর্মিণী ফাতেমা জোহরা সীমা আসমাকে তার বাবার বাড়ি একলাসপুরে পাঠিয়ে দেন। তখন ফাতেমা জোহরা সীমার বাবার বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছিল। ডানপিটে আসমার সঙ্গে এক নির্মাণ শ্রমিকের হৃদয়ের আদান প্রদান ঘটলে তারা পালিয়ে যায় চট্টগ্রামে। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে একটা কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় আসমা। কখনো সুখে কখনো স্বামীর অত্যাচারে জীবন বয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ স্বামী প্রবাসে চলে গেলে আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসে আসমা। আশ্রয় নেয় পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায়।
এবার জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফিরে আসা আসমার শেকড়ের খোঁজ কীভাবে পাওয়া যায় তার জন্য ফরহাদ কিসলুর সহধর্মিণী সীমা স্থানীয় সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান নড়াই গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এটুকু সূত্র ধরে। সাংবাদিক মিঠু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বিটিভি ও ইত্তেফাক প্রতিনিধির মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে।
পুরো ঘটনাটি নিজ চোখে দেখা মানবিক সংগঠক সুমন নুর জানান, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ইমুতে ভিডিও কলে কথা হয় আসমার মা, ভাইয়ের সঙ্গে। সে এক আবেগপূর্ণ দৃশ্য! দীর্ঘ ২০ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে দেখে আসমার মা, বোন আসমার ভাই আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। এদিকে আসমারও যেন মুখে কথা ফোটে না।
এদিকে, দীর্ঘ ২০ বছর পর হারিয়ে একটা মেয়ে সিনেমাটিকভাবে তার মা-ভাইসহ পরিবারকে ফিরে পাওয়ার নেপথ্য কারিগর ফাতেমা জোহরা সীমা ও সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুকে সবাই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তাদের দুইজনের এই অসাধ্য সাধন একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।