রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অশনি সংকেত
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া
🕐 ২:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৫, ২০২০
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছেই। এর মাঝে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কয়েক দিন আগে এক রোহিঙ্গা নারী নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, এর পাশেই গড়ে উঠেছে অস্ত্রের কারখানা। আবার রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে আনছেন অস্ত্র, সাপ্লাই দিচ্ছেন সন্ত্রাসীদের। এদের অনেকে মাদক চোরাকারবারীর সঙ্গেও রয়েছেন জড়িত। স্থানীয়দের হাত করে যুবসমাজ ধ্বংস করা হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাদের এসব কর্মকান্ডে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। কথা বলতে গেলেই দেওয়া হচ্ছে নানা হুমকি-ধামকি।
জানা যায়, গতকাল ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। নিহতরা হলেনÑ ক্যাম্প ২ ডব্লিউডি ৩ ব্লকের সৈয়দ আলমের ছেলে ইমাম শরীফ (৩২) ও একই ক্যাম্পের মো. ইউনুছের ছেলে শামসুল আলম (৪৩)। গত শনিবার রাত ১২টা ও রোববার ভোর ৪টা এবং সকালে অগ্নিকান্ড ও কুতুপালং ক্যাম্পে পৃথক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় হতাহত হয়। রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে সৈয়দ আলম, আনোয়ারা বেগম, ইমাম হোসেন, মো. রাসেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন এনজিওর হাসপাতাল ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা রোববার সকালে ক্যাম্পের সি-ব্লকের ৩৮ শেড-৪৭/৪৮ ই-ব্লকের ১২/১৩ শেডের ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগেরর খবর পেয়ে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এক অভিযোগে জানা যায়, কয়েক দিন আগেই আরসা ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে আসছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পের সমিরা আক্তার (৪৩) নামের এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়। আর ক্যাম্পের পাশেই পাওয়া যায় অস্ত্রের কারখানা। গত শুক্রবার ক্যাম্প লাগোয়া পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ দুই কারিগর ও চার রোহিঙ্গা ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উখিয়ার মধুরছড়ায় র্যাব এবং শনিবার ভোরে হ্নীলা আশ্রয়ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে বিজিবি এ অভিযান চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সন্ত্রাসীদের আরতখানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। দিনে রাতে চলছে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। সাধারণ রোহিঙ্গা ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। পাশাপাশি কিছু বলতে গেলে হামলা ও খুন হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিনের নৈরাজ্যের ঘটনায় স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। ক্যাম্পে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। তিনি চিরুনি অভিযান চালিয়ে এসব কিছু প্রতিরোধের দাবি জানান।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ হতাহতদের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে র্যাব, পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ান সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমদ, এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।