কক্সবাজারে নতুন মিশনে পুলিশ
তিন বার্তা নিয়ে সক্রিয় ১৫০৭ সদস্য
কক্সবাজার প্রতিনিধি
🕐 ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
চলতি সপ্তাহে কক্সবাজার জেলায় যোগ দিয়েছেন পুলিশের ১ হাজার ৫০৭ সদস্য। কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার- এখানে সবাই নতুন। আর আকস্মিকভাবে বদলি হয়ে আসা এসব পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মনোবল ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে বিশেষ মিশন। তিনটি বার্তা সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের নতুন মিশন শুরু হলো।
তিনটি বার্তা হলো- অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, অনিয়ম রোধ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স। বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপকাণ্ডের পর বদলে দেওয়া কক্সবাজার জেলা পুলিশের নতুন সদস্যদের এমন বার্তা দিয়ে মনোবল চাঙ্গা করতে চান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেনও গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কয়েকটা বিষয় নিয়ে জিরো টলারেন্স প্রয়োগ করব। তার মধ্যে মাদক, আমাদের শৃঙ্খলা রয়েছে। আরেকটি হচ্ছে দুর্নীতি।
তিনি বলেন, আমরা সব কিছু সঠিকভাবে করতে পারব- এমনটি নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। কিন্তু সুন্দর আচরণে সঠিক পরামর্শটা নিশ্চিত করার সক্ষমতা সবার রয়েছে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইনের প্রয়োগ হলে সকল কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হবে। এতে গড়ে উঠবে আস্থাশীলতা।
মানুষের আস্থা নিবিড় করে পুরো কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিচ্ছন্ন রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিআইজি বলেন, মাদক কারবারিদের নতুন তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে কঠোরভাবে কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে সেই লক্ষ্যে পুলিশকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কাজে গতিশীলতা বাড়ানো এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ কাজ করবে। জেলা পুলিশে সবাই নতুন হলেও কাজের বেলায় দক্ষতার পরিচয় দেবে- এটিই আমার বিশ্বাস।
আর কাজের বেলায় জনকল্যাণকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগ রয়েছে ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি জেলার কোনো না কোনো থানায় পোস্টিং নিয়ে থাকতে। আমি যতদিন দায়িত্বে থাকব ততদিন এ প্রথা চালু হবে না। গণমাধ্যমে ব্রিফিংয়ের আগে ডিআইজি কক্সবাজার সদর মডেল থানার যোগদান করা কর্মকর্তাদের ব্রিফিং করেন।
সবাইকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, মেরিন ড্রাইভের একটি চেকপোস্টে গুলিতে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ায় এটাকে অপেশাদারি আচরণ বলে অবহিত করা হচ্ছে। এ ঘটনার রেষে চরম বিতর্কের কারণে কক্সবাজারে দায়িত্বরত পুরোনো সকলকে একযোগে বদলি করে নতুন টিম দেওয়া হয়েছে। এটার মূল লক্ষ্য হলো পেশাদারিত্ব ফুটিয়ে তুলে মানুষের আস্থাকে নিবিড় করা। সুন্দর আচরণ, সঠিকভাবে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে পেশাদারিত্ব নিশ্চিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। পুরনো তালিকা দেখে তদন্তের মাধ্যমে নতুন তালিকা করে এ ব্যাপারে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
এসপি বলেন, যারা ভালো কাজের জন্য পুলিশের কাছে আসবে, তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আসলে তাদের বিরুদ্ধে চরম কঠোর হবে পুলিশ। আমার তরফ থেকে বার্তা হলো- দালালদের জন্য কক্সবাজার পুলিশের দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ।
এ সময় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস, ওসি (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে, ওসি (অপারেশন) সেলিম উদ্দিন ও শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেনসহ জেলা পুলিশের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দেশজুড়ে মাদক বিস্তারে চরম সমালোচনার মুখে কক্সবাজার জেলার। কোনোরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই জেলার মাদক নির্মূলে দায়িত্ব নিতে হলো পুলিশ সদস্যদের। ভাষাসহ নানামুখী জটিলতায় নতুন আরও এক চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ দাশ এবং ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীসহ ১১ জন পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এ সমালোচনার জের ধরে গত সপ্তাহে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে পুরো বদলে দেওয়া হয়।