ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মানবিক পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন

নোয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০

করোনার সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সন্ধান মিলে। ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে অঘোষিত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। নোয়াখালীতে শুরুর দিকে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ, অসহায়, প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত (বেদে, হিজড়া, ভিক্ষুক) সম্প্রদায়, অসহায় পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ পরিবার ও অসহায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিবার, প্রবাসী পরিবার, নদীভাঙা পরিবার এবং সংবাদকর্মী ও ফুল ব্যবসায়ীদের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীসহ সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ এবং করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। এমন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন খোলা কাগজের নোয়াখালী প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন সুমন।

করোনার সময় নোয়াখালীতে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে যদি একটু বলতেন...
চলমান করোনা সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সর্বসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে নোয়াখালীর পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়াও জেলার পুলিশ সদস্যগণ প্রতিনিয়ত মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্ব-স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য এবং গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সব থানার ওসিসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের জরুরি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। এছাড়া থানা পুলিশ স্ব-স্ব এলাকায় স্থানীয় প্রবাসীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে থাকা নিশ্চিত করেছেন।

সংক্রমণরোধে পুলিশের সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন ছিল?
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সম্মুখসারিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পুলিশ লাইন্স, গোয়েন্দা শাখা, জেলা বিশেষ শাখা ও ট্রাফিক ইউনিটসহ জেলার সব থানায় মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্ল্যাভস, আই প্রটেক্টর, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি বিতরণ করা হয়। জেলা পুলিশের সব ইউনিটের পুলিশ সদস্যদের দুটি টিমে বিভক্ত করে তাদের একটি টিম দিয়ে নিরাপত্তা ডিউটি এবং অন্য টিমকে রিজার্ভ রাখা হয়।

এ সময়টায় প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা কেমন ছিল?
স্ব-উদ্যোগে কভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসার নিমিত্তে নোয়াখালী পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রথম কভিড অক্সিজেন ব্যাংক। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার করোনাভাইরাসে আক্রান্তসহ যেকোনো রোগী এ ব্যাংক থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সাপোর্ট নিতে পারবেন। এ পর্যন্ত ৮৪ জন মুমূর্ষু করোনা রোগী এ ব্যাংক থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন এবং আমার উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলার করোনাজয়ী ৭৪ পুলিশ সদস্য প্লাজমা দান করেন। করোনায় এ পর্যন্ত ২৬৭ পুলিশ আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২৬৪ জন।

জেলায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম
অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- (১) জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় এমরান (৭) নামে শিশুর হত্যার রহস্য উদঘাটন। এই ঘটনায ওয়াসিম আকরাম (২০) ও মো. রনি (১৯) নামে ২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। (২) জেলার চাটখিল শাহ আলম (৬০) নামে এক বৃদ্ধা হত্যায় জড়িত ২ আসামিকে গ্রেফতার। (৩) জেলার কবিরহাটে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৫ ডাকাতকে লুণ্ঠিত মালামালসহ গ্রেফতার। (৪) সদর উপজেলার সুধারাম মডেল থানায় কাভার্ড ভ্যানের চালক হত্যায় জড়িত ৭ আসামি গ্রেফতার।

অভিযান ও গ্রেফতার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম
জুলাই ২০১৯ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত অভিযানে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৫টি একনলা বন্দুক, ২৪টি এলজি, ৩৮টি পাইপগান, ১৪ রাউন্ড গুলি, ১১২ রাউন্ড কার্তুজ, ৬টি রকেট লাঞ্চার, ১টি পাইপগান, ২টি কুড়াল এবং ১৪৪টি অন্যান্য দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্ত রুজুকৃত ৮৬ মামলায় ১৩১ অস্ত্রধারীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৯ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, তালিকাভুক্ত ৭৬ জন পেশাদার অপরাধী, তালিকাভুক্ত ৩৮ জন সন্ত্রাসী, ৪ জঙ্গি, ২ কুখ্যাত ডাকাত, ৮ জুয়াড়ি এবং ৩ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ
নোয়াখালীতে যোগদান করেই জেলাকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি বছর জেলায় ৫২ হাজার ৪২৭ পিস ইয়াবা, ৩৩ কেজি ৫০৩ গ্রাম গাঁজা, ৩৫৩ লিটার ২০০ মি.লি. মদ, ১৫৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৩০ ক্যান বিয়ার, ১৬ বোতল বিয়ার, হুইস্কি ২ বোতল উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্ত রুজুকৃত ১১৬৬ মামলায় ১৫৯৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

চট্টগ্রাম রেঞ্জে নোয়াখালী পুলিশের অর্জন কেমন ছিল
সুদক্ষ তদারকির ফলে চট্টগ্রাম রেঞ্জে নোয়াখালী জেলা পুলিশ এবং জেলা ডিবি ইউনিট ২ বার করে শ্রেষ্ঠ হয়। এছাড়া মানবতাবাদী কার্যক্রম, অপরাধ দমন, সাজা পরোয়ানা তামিল ও মামলা তদন্তে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ নোয়াখালী জেলা সর্বমোট ২২টি ‘রেঞ্জ পুরস্কার’ লাভ করে। উল্লেখ্য, জুলাই ২০১৯ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা চট্টগ্রাম রেঞ্জে ২ বার সর্বোচ্চ সংখ্যক, ৫ বার ২য় সর্বোচ্চ সংখ্যক এবং ১ বার ৩য় সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার লাভ করে। জেলা ডিবি ইউনিট টানা ৭ বার রেঞ্জ সেরা পুরস্কার অর্জন করে।

মুজিববর্ষ উদযাপনে নোয়াখালী জেলা পুলিশ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলায় নবাগত ৯০ পুলিশ কনস্টেবলকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ উপহার দিয়ে বরণ করা হয়।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।

 
Electronic Paper