কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ
মিশু দে, রাঙ্গামাটি
🕐 ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২০
তিন মাস ১০ দিন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর মাছ আহরণ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএফডিসির তিনটি বিপণনকেন্দ্র রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই ও মহালছড়ি ঘাটে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হয় মাছ ধরা। এদিকে শতদিন পর মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় খাতসংশ্লিষ্টদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কাজে ফিরেছেন শ্রমিক-কর্মচারী, ব্যবসায়ীসহ সকলেই। চালু হয়েছে বিএফডিসির তিনটি বরফকলও।
জেলে ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রথমদিনে অনেক বেশি মাছ আহরিত হয়েছে। আহরিত মাছের মধ্যে ছোট মাছের আধিক্য বেশি। এছাড়া এবছর প্রথম দিকেই অতিরিক্ত মাছ আহরণের অন্যতম কারণ হলো কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতা। হ্রদে পানি কম থাকায় এতে করে মাছ ধরা পড়ছে বেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছরের পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয় নতুন মৌসুম। আগস্ট থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই নয় মাসকে মৌসুম ধরা হয়। তবে এ বছর কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে ১০ দিন পর অর্থাৎ ১১ আগস্ট থেকে মাছ আহরণ পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৭
কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ
শুরু হয়েছে। বিএফডিসির রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, তিনমাস ১০ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তাই আমাদের কাজকর্মও ছিল না। এখানকার অনেকেই কাপ্তাই হ্রদে ওপর নির্ভরশীল। অনেকেরই আয়-রোজগারের জায়গা বিএফডিসি। এখন আবার মাছ ধরা শুরু হলো। আমরা দীর্ঘ অলস সময় পার করে কাজে যোগ দিলাম।
কয়েকজন পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় হ্রদে এ বছর পানির পরিমাণ অনেক কম। এই কারণে প্রথম দিনে অনেক মাছ ধরা পড়েছে, যা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু এখন যদি কম পানিতে সব মাছ ধরা পড়ে যায়। তবে মৌসুমের শেষ সময়ে হ্রদে মাছ আহরণ হবে না। তাই এখানে বৃষ্টিটা বড় ফ্যাক্টর। তারা জানান, শতদিন পরে আমাদের কাজকর্ম শুরু হয়েছে, জেলে ও শ্রমিকদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিবছরই কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিনমাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এবছর তাই দেওয়া হয়েছে। তবে হ্রদে পানি কম থাকায় আমরা পানির অপেক্ষায় ১০ দিন পর আহরণ চালু করেছি। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে ১২ হাজার ৬৯৫ টন মাছ আহরিত হয়েছে; এর বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরে এর চেয়ে ভালো হবে, যা আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া এই বছর আমরা কাপ্তাই হ্রদে ৪৩ টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেছি। যা বিগত সময়ের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ।