ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চট্টগ্রামে ২২ হাজার চামড়া ভাগাড়ে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
🕐 ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৫, ২০২০

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কেনা দামের এক তৃতীয়াংশ মূল্যও না পেয়ে হাজার হাজার চামড়া রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সিটি করপোরেশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেবে ২২ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে রাস্তায়ই। সে সব চামড়া ফেলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার আড়ৎদার সিন্ডিকেট সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে একেবারে কমমূল্যে ৫০ টাকা কিংবা ১০০ টাকা দরে চামড়া কিনতে চাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এতে করে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চামড়া নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়ার মূল্য দূরে থাক, গাড়ি ভাড়াও তুলতে না পারায় নগরীর দেওয়ানহাট, আতুরার ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে কিংবা সড়কে চামড়া ফেলে দেন। আতুরার ডিপো চামড়ার আড়ত এলাকায় ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই পশুর চামড়া নিয়ে আসতে থাকে ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, প্রতিটি চামড়া গড়ে দেড়শ টাকায় কিনে নিয়ে এসেছেন কিছুটা লাভের আশায়। শুরুতে আড়তদাররা চামড়া প্রতি পঞ্চাশ টাকা মূল্য দিতে রাজী হয়। এতে রাজী না হয়ে এক পর্যায়ে অন্তত মূল টাকাটা পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করতে থাকে ব্যবসায়ীরা। এভাবে দিনরাত অপেক্ষার মাঝে এখন বিক্রিত দূরের কথা কেউ কাছেও আসছে না তাদের।

গত বছরের মতো এবারও অনেকের ফেলে যাওয়া চামড়া রাস্তা থেকে অপসারণ করতে শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৮ হাজারের মতো নষ্ট চামড়া ময়লার ডিপোতে ডাম্পিং করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৪ হাজারের মতো নষ্ট চামড়া নিয়ে গেছে ভোক্তা অধিকার সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে আড়ৎদার বলছেন, দীর্ঘ সময় লবণবিহীন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব চামড়া আর কোন কাজে আসবে না বিধায় সেসব চামড়া কিনছে না তারা।

চট্টগ্রামে বিক্রি করতে না পেরে শতশত চামড়া ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। নগরীর আতুড়ার ডিপো এলাকায় আড়ৎদারদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও সংগৃহীত চামড়া বিক্রি করা যাচ্ছে না। আড়ৎদাররা বলছে নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ায় চামড়ার মান নষ্ট হয়ে গেছে, তাই এসব চামড়া আর কেনা সম্ভব না। এদিকে ধার-দেনা করে অল্প লাভের আশায় চামড়া সংগ্রহ করে লাখ লাখ টাকা লোকসানে চোখে অন্ধকার দেখছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি চামড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে দেড়শ টাকা করে কিনলেও আড়তদাররা এসব চামড়া এখন দশটাকা করেও কিনতে রাজি নয়।

এ অবস্থায় সড়কেই চামড়া ফেলে রেখে যাচ্ছে অনেকে। চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতি জানিয়েছে, গত কয়েকবছর ধরে ট্যানারি মালিকরা তাঁদের পাওনা পরিশোধ না করায় এমনিতেই বিপাকে আছে আড়তদাররা। তাই অনেকে এবার চামড়া সংগ্রহ করছে না। তারপরও চট্টগ্রাম অঞ্চলে পৌনে চার লাখের মতো চামড়া ইতোমধ্যে সংগৃহিত হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের জানান, এই বছর প্রায় ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা যায়নি। সমিতিভুক্ত ১১২ জন ও এর বাইরে ১৫০ জন আড়তদার এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন। কিন্তু মৌসুমি চামড়া বিক্রেতাদের চাহিদা মতো চামড়া সংগ্রহ করা যায়নি। চট্টগ্রামে ট্যানারি না থাকায় ঢাকা ট্যানারি মালিকদের মন মর্জির ওপর তারা চামড়া সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি জানান, প্রথম দিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বেশি দাম চাওয়ায় কিনতে পারেননি তারা। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর নামমাত্র মূল্যে দিতে চাইলেও চামড়ার মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা আর কেনেননি।

 
Electronic Paper