টুং টাং শব্দ নেই কামার পল্লীতে
কৌশিক দাশ, বান্দরবান
🕐 ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২০
প্রতি বছর কোরবানির ঈদ এলে বান্দরবানে কামাররা পার করতেন ব্যস্ত সময়। দা, ছুরি, বঁটি বিক্রি আর শান করতে করতে সময় পার করতেন কামাররা। ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচা বিক্রি ভালো হওয়ায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে পুরোদমে কাজ শুরু করে কামার পল্লীর প্রতিটা সদস্য।
কিন্তু এবারের কামার পল্লীর চেহারাটা অন্যরকম। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে প্রভাব পড়েছে দেশের সকল ব্যবসা ক্ষেত্রে। সেই প্রভাবের অনেকেটাই পড়েছে বান্দরবানের কামার পাড়ায়। প্রতি বছর এই সময়টা বান্দরবানে বিভিন্ন মাঠে বসত বিশাল গরু ছাগলের হাট। কেরানীহাট, দোহাজারী, বাজালিয়া, সুয়ালক, রেইচাসহ বিভিন্ন স্থান হতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরগমে মুখরিত হতো বান্দরবানের কোরবানির হাটগুলো।
কিন্তু এবারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে সীমাবদ্ধতা এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার ও পশুর হাটে নিয়ম মেনে চলাচলসহ করোনার ভয়ে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা আসছে না পশুর হাটে। অন্যদিকে পশু বিক্রি কম হওয়ায় পাশাপাশি কামারের দোকানগুলোতে কোরবানির হাতিয়ার দা, ছুরি, বঁটিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিক্রিও কমে গেছে।
রোববার বান্দরবান বাজারে গিয়ে দেখা যায় কামাররা অলস সময় পার করছেন। কামার সুবাস কর্মকার জানান, আগের বছরে কোরবানি ঈদের ১০ দিন আগে থেকে রাত দিন নতুন দা, ছুরি, বঁটি তৈরি এবং শান দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছি, দিনে আয় হতো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর এবার করোনাভাইরাসের ফলে কোনো ব্যবসা নেই। দিনে ৫০০ টাকা আয় করতে পারি না। লোকজন আগের মতো আর দা, ছুরি, বঁটি নিয়ে আসে না এবং অর্ডারও দেয় না। তাই আর কী করব কাজ নেই, ব্যস্ততাও নেই। এ অবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি।
কামার পরিবারের আরেক সদস্য আনন্দ কর্মকার জানান, আমাদের এই ব্যবসায় নতুন জিনিস বিক্রির চেয়ে পুরনো জিনিস ঠিক করা আর শান দেওয়াতে লাভ বেশি। বর্তমানে মানুষ আর পুরনো জিনিস ঠিক করতে আগ্রহী নয়। এখন মানুষ নতুন নতুন জিনিস কিনছে। তার ওপর বিভিন্ন দোকানে চায়না ছুরি, দা, বঁটি কিনে তাদের কাজ সেরে নিচ্ছে আর এতে আমাদের কামারপল্লী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।