ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার হার কমছে, বাড়ছে ঝুঁকি 

আরিচ মাহমুদ
🕐 ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০

চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার হার কমে যাচ্ছে। ফি নির্ধারণের পর থেকে কমতে শুরু করেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এতে করে শনাক্তও হচ্ছে কম। পাশাপাশি হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে তেমন চাপ নেই রোগীদের। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে মহানগর ও উপজেলাগুলোতে গড়ে উঠা আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে ৮০ শতাংশ সিট খালি। এছাড়া জেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে খালি থাকছে অর্ধেকের বেশি বেড। আইসিইউ ও এইচডিও বেডও সহজে মিলছে। প্রাইভেট চেম্বারগুলো বন্ধ থাকায় মিলছে না চিকিৎসা সেবা।

এদিকে চট্টগ্রামে যে কোনো হাসপাতালের বেড ও সেবার তথ্য জানতে দেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, সরকারি ও বেসরকারি ৬টি ল্যাব থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৩শ’ থেকে ১৪ শ’ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করে আসছিল। কিন্তু গত পাচ দিন ধরে নমুনা পরীক্ষা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৫৬টি।

করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬৭ জনের। এর আগের দিন রোববার নমুনা পরীক্ষা হয় ৫৯৭টি। গত ১১ জুলাই ৪২৫টি, ১০ জুলাই ১০৯৯টি ও ৯ জুলাই ৭৮১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। নমুনা না পাওয়ার কারণে গত চারদিন ধরে পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার একশ নমুনা পরীক্ষা করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিআইটিআইডি থেকে একশ জনের স্যাম্পল নিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে সিভাসু। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যিালয় ল্যাবে। ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চবিতে তিনশ নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ১৭৫টি পর্যন্ত। এ ল্যাবে বোয়ালখালি উপজেলা থেকে সর্বশেষ চারটি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে ৬টি নমুনা এসেছে।

চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি ) ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ জানান, বিআইটিআইডিতে গত ২৫ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত করণের পরীক্ষা হচ্ছে। এ রোগ শনাক্তের এক সময় নমুনা পরীক্ষা জট তৈরি হতো। এক হাজারের বেশি পুরনো নমুনা জটে আমাদের হিম শিম খেতে হয়েছিল। এখন দক্ষতা বেড়েছে, সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু কিছুদিন ধরে নমুনা সংগ্রহ কম থাকায় তেমন চাপ নেই।

ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে হোম কোয়ারান্টিনে আছেন ৮১৬ জন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৭৮ জন। প্রাইভেট হাসপাতালে ১৩৩ জন। আর আইসিইউতে আছেন ৪৩ জন।

তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে সিট খালি আছে ২৬৪টি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১৭৫টি।

এদিকে করোনা রোগীদের সেবা দিতে চট্টগ্রামে কিছু স্বপ্নবান মানবিক সেচ্ছাসেবী মানুষ দুর্যোগময় মুহূর্র্তে চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছে ১১টি বেসরকারি আইসোলেশন সেন্টার। প্রায় এক হাজার শয্যা বিশিষ্ট এসব হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের অধিকাংশ সিট খালি পড়ে আছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত দুইশ শয্যার আইসোলেশনে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ২৪ জন। চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১৪ জন। হালিশহরে অবস্থিত করোনা আইসোলেশ সেন্টারে করোনা রোগী ৩৭ জনসহ ভর্তি আছেন ৫৭ জন।

এ সেন্টারে অন্যতম উদ্যেক্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আমাদের কাজ শুরু করতে হয়েছে। এ সেন্টারে ১২ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। তাদের আর্থিক সম্মানীর ব্যবস্থা করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। রোগীদের খাওয়া, ওষুধসহ নানা সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবস্থা করা গেছে। অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন।

পতেঙ্গা সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে আইসোলেশনে ১৮ জন রোগী ভর্তি আছে। বন্দর ইপিজেড আইসোলেশন সেন্টারে সাতজন। বাকলিয়া মুক্তি  করোনা আইসোলেশন সেন্টারে বেড আছে প্রায় একশোটি। রোগী ভর্তি আছেন ২৫ জন। হালিশহর আল মানাহিল নার্চার হাসপাতালেও অধিকাংশ সিট খালি। পাশাপাশি করোনা রোগীদের জন্য গড়ে ওঠা আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সিট খালি পড়ে আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুইয়া জানান, সরকার ফিস নির্ধারণের পর করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। করোনা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা কাজ করছে। অবশ্য প্রবাসীরা নমুনা দিচ্ছেন। বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে মূলত বাধ্য হয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। অন্য দেশে যাবার ক্ষেত্রে করোনা রির্পোট বাধ্যবাধকতা না থাকালে তারাও নমুনা পরীক্ষার জন্য আসতো না। আবার বিভিন্ন উপজেলার থেকে নমুনাগুলো আসতো বেশি। গত এক সপ্তাহ থেকে নমুনা আসা অনেক কমে গেছে। তবে করোনা নমুনা পরীক্ষা কমে গেলে এ রোগে আক্রান্তে সংখ্যা বৃদ্বির পাশাপাশি দেশ বড় ধরনের ঝুকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

 
Electronic Paper