ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তিন শতাধিক ব্যবসায়ীকে পথে বসাল লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারের উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্যে প্রায় ২০০টি দোকান উচ্ছেদ করেছে জেলা পরিষদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে উপার্জনের শেষ চিহ্নটুকু হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তিন শতাধিক অসহায় ব্যবসায়ী পরিবার। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ পৌর আলেকজান্ডার বাজারে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের ইজারাকৃত ভূমির প্রায় ২০০টি দোকানঘর উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের স্থানীয় দুর্নীতিবাজ সদস্যদের লোভের বলি হয় ইজারাকৃত  ভূমির প্রায় দুইশত দোকানদার।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাধীনতা পর থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছরের অধিক সময় ধরে চর আলেকজান্ডার মৌজায় ইজারাকৃত ভূমির জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদকে শর্তানুযায়ী নিয়মিত ইজারা ফি, ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করে খুচরা ব্যবসায় পরিচালনা করে পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করে আসছেন। বিভিন্নভাবে ধার-কর্জ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে জীবন সংসারে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন আমরা পথের ভিখারী। ধার-কর্জ পরিশোধের কোনো উপায় নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জেলা পরিষদের জায়গাটি ব্যবসায়ীরা ছেড়ে দেয়। এই অবস্থায় সরকারের উচ্চ মহলের সুদৃষ্টিতে পুনরায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জরুরি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থা একেবারে শোচনীয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যবসায়ী জানান, জেলা পরিষদ আইন-২০০০, বিধিমালায় উল্লেখিত আইনের ধারা ৪৮-এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য বা কোনো কর্মচারী বা তাদের কোনো আত্মীয়ের নিকট অথবা তাহাদের মালিকানাধীন বা তাহাদের স্বার্থ রহিয়াছে এইরূপ কোনো কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা ব্যক্তির নিকট পরিষদের কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাইবে না।

অথচ, উল্লেখিত আইন অমান্য করে জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এ নিয়ে পাঁয়তারা করছে। দোকানের পজিশন দেওয়ার জন্য অনেকের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জেলা পরিষদ যদি অন্যত্র ইজারা কিংবা দোকান বা মার্কেট করে ভাড়া দেয় তাহলে আমরা সরকারি নিয়ম মেনে স্বাধীনতার পর থেকে এখানে ইজারা ফি, ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করে ব্যবসা করে আসছি, তাহলে আমরা কী দোষ করেছি। নিয়মানুযায়ী আমরা দীর্ঘ বছরের ইজারাদার হিসেবে আমাদের মূল্যায়ন করার কথা; কিন্তু এ নিয়েও চলছে নানান রাজনীতি।

এদিকে জেলা পরিষদের বিদায়ী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন জাহান স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়, জেলা পরিষদের আওতাধীন ২নং খতিয়ানের ৫২৩২-৫২৪৫ দাগগুলোর স্থানে দোকান বা মার্কেট নির্মানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো অনুমোদন নেই। এক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী সরকারি কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি বিধায় উল্লেখিত স্থানে সরকারের মার্কেট নির্মাণের কোনো পরিকল্পনাও নেই।

ইজারাদার মো. লিটন ও জসিম আহম্মদ খান অভিযোগ করেন, অন্যায় ও অবৈধভাবে আমাদেরকে ইজারা দিচ্ছে না জেলা পরিষদ। ইজারা ফি, ভ্যাট ও আয়কর আদায় বেশ কিছুদিন বন্ধ করে দিলে আমরা জানতে চাইলে সঠিক জবাব দেননি কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদকৃত দোকানগুলোর মধ্যে নিয়মিত ইজারাদার ছিল ২৫ জন। নিয়মিত ইজারা ফি, ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ করার পরেও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আমাদের উচ্ছেদ করে অবিচার করা হয়েছে। এদিকে জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেন ওই জায়গায় নতুন করে ঘরের পজিশন বিক্রি করছে। ঘর প্রতি ৬ লাখ টাকা করে অবৈধভাবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন তিনি।

দোকানের পজিশনের জন্য টাকার নেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, টাকার নেওয়ার অভিযোগ আদৌ সত্য নয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান দাবি করেন, অভিযান চালিয়ে প্রভাবশালীদের কব্জা থেকে পরিষদের সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হয়েছে। কার্যত ইজারা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গায় সরকারিভাবে টিনশেড ঘর নির্মাণ করে নতুন করে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এরমধ্যে কিছু পুরাতন ইজারাদারকেও অগ্রধিকার দেওয়া হবে। নিয়মিত ইজারা ফি, ভ্যাট ও আয়কর প্রদান করা সত্ত্বেও আগের ইজারদারকে কেন উচ্ছেদ করা হল জানতে চাইলে এড়িয়ে যান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল মোমিন বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গায় সরকারিভাবে মার্কেট নির্মাণ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে দীঘদিনের কিছু ইজারাদারকে অগ্রাধিকার দেবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী অসহায় ব্যবসায়ীদের দাবি পুনরায় তাদের ইজারা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার সু-ব্যবস্থা করে দিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

 
Electronic Paper