ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হালদাপাড়ে নির্ঘুম রাত

আরিচ মাহামুদ, চট্টগ্রাম
🕐 ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৭, ২০২০

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দুই পাড়ের শত শত মানুষ। আমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমায় মেঘের গর্জন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল নামলেই রুই জাতীয় মাছগুলো ডিম দিতে পারে হালদা নদীতে। রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহে মেতে উঠবে অপেক্ষায় থাকা মানুষেরা। হাটহাজারী-ফটিকছড়ির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হালদা নদীর দুই পাড়ে ইতোমধ্যে আবাস গড়েছেন প্রায় দেড় হাজার ডিম সংগ্রহকারী। হালদার দুই পাড়ে তৈরি করা হয়েছে রেণু ফোটানোর কুয়া।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। তৈরি করা হয়েছে কুয়া, নৌকা জাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বড় পাতিলসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যথাসময়ে মা মাছ ডিম ছাড়লে ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠবে হাটহাজারী, ফটিকছড়িরসহ চট্টগ্রামের এ ডোনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, ৪ মে থেকে ডিমওয়ালা মাছের আনাগেনা শুরু হয়েছে। আরও চার-পাঁচ দিন সময় আছে। এ সময়ের মধ্য অনুকূল পরিবেশ পেলে রুই মাছ হালদায় ডিম দিতে পারে। আবার কোনো কোনো সময় জুন মাসে ডিম ছাড়ে মা মাছগুলো।

হালদা নদীকে মা মাছের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। গভীর রাতে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ ঘেরা জাল উদ্বার করে ধ্বংস করে আসছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন। অভিযানের সময় ঘেরা জালে আটকা পড়া ডিম ছাড়তে আসা রুই জাতীয় মাছ নদীতে অবমুক্ত করে দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রাকৃতিক এ মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষায় বালু উত্তোলন বন্ধ, ঘেরা জাল জব্দসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। শুধু ডিম সংগ্রহের সময় নয় পুরো বছর আমরা হালদাকে রক্ষা করতে চাই। প্রায় রাতে তিনি অভিযান চালান হালদাতে। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকায় হালদা নদীতে অভিযান চালানো হয়। মূলত এ অঞ্চলে রুই জাতীয় মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয়। অসময়ে সেসব স্থানে ঘেরা জাল দিয়ে ধরে নেওয়া হচ্ছে ডিম ছাড়তে আসা রুই জাতীয় মাছ।

হালদা রক্ষা কমিটির সদস্য নোমান খান জানান, হালদা নদী জোয়ার ভাটার নদী। প্রতিনিয়ত মাছ আসছে এ নদীতে। এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা কারেন্ট জালের পাশাপাশি রাতের অন্ধকারে রোটানল ব্যবহার করে বড় মাছ শিকার করে। হালদা রক্ষায় এবার প্রশাসনের উদ্যোগ আশা জাগিয়েছে। এভাবে কঠোর অভিযান চলমান থাকলে হালদা রক্ষা পাবে। ডিম সংগ্রহের মৌসুমে প্রকৃত সুফল পাবে দেশবাসী।

 
Electronic Paper