ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নুসরাত হত্যার এক বছর, দ্রুত রায় কার্যকর চায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০২০

বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ (১০ এপ্রিল)। গত বছরের ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে নুসরাতকে হত্যার চেষ্টা করে তার সহপাঠীরা। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। অপরদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তাকে থানায় ঢেকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা প্রচারের ঘটনায় ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আইসিটি আইনে আরও একটি মামলা করেন।

নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার পরর দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। এরপর বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনে নামে সচেতন মানুষ।

নুসরাতের পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা কর্তৃক যৌন নিপীড়নের শিকার হন নুসরাত জাহান রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিনই পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এছাড়া নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

মামলাটির প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশান (পিবিআই) ১৬ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়। ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে ৬১ কার্য দিবসের মধ্যে ৮৭ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২৪ অক্টোবর সকল আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

নিম্ন আদালতে রায়ের পর প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ, নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসাইন ও উম্মে সুলতানা পপি খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। সে অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আছে।

তিনি আরও জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়েছিল। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলাটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতি কেটে গেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলাটির শুনানি হবে।

এদিকে নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে ১৫ এপ্রিল তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই অভিযোগ গঠন শেষে ৩১ জুলাই থেকে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০ নভেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। রায়ে ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম সাইবার ট্রাইব্যুনালের প্রকাশিত রায়।

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, বেশ কিছু দিন যাবত আসামির স্বজনরা আমাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষোদগার করে আসছেন। তারা আমাদের বিষয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছেন। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আশাকরি তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। রায় দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধীদের জন্য এটি হবে একটি নিদর্শন। তিনি নুসরাতের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

 
Electronic Paper