ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বনাঞ্চলের ভেতরে ইটভাটা হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
🕐 ১২:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২০

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সীমানা ঘেঁষে লামার ফাঁসিয়াখালীর বনাঞ্চলের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ আটটি ইটভাটা। এসব ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদফতর, বনবিভাগ ও প্রশাসনের কোন অনুমতিপত্র নেওয়া হয়নি। তিনটি ড্রাম সিমনি ও পাঁচটি উঁচু চিমনি দিয়ে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটা লাগোয়া সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছপালা।

ইটভাটাগুলো ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ককে তিন পয়েন্ট থেকে ঘেরাও করে রেখেছে। এসব ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পড়ে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের গাছপালা বিবর্ণ হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মিউনিসিপ্যাল এলাকা ব্যতিত অন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করতে হলে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তত ১০মাইল দূরে স্থান নির্ধারণপুর্বক সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু সাফারি পার্কের পাশে ফাসিয়াখালীতে গড়ে তোলা অবৈধ আটটি ইটভাটার ক্ষেত্রে সরকারি কোন ধরণের নিয়মকানুন মানা হয়নি। শুধুমাত্র প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অভিযুক্ত ভাটা মালিকরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাফারি পার্কের একেবারে পাশে ভাটা স্থাপনপূর্বক সেখানে ইট পুড়ানো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। ওইসব ইটভাটার কারণে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে সাফারি পার্কের পাশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বন্য জীবজন্তুর যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

ইটভাটার জন্য জ্বালানি সংগ্রহ ও মাটি দিয়ে ইট তৈরির জন্য পাহাড় কাটার কারণে বনাঞ্চলে পশুর খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ায় এ বছর লামা বনাঞ্চলে অন্তত পাঁচটি বন্যহাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব ইটভাটায় বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে। পাহাড় কেঁটে মাটি নিয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ইটাভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি পার্কের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। এ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকার্তা বনাঞ্চলের অনেক পশুপাখি, গাছপালা ও লতাগুল্ম মরে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বনাঞ্চল উজাড় করে সংগৃহীত কাঠগুলো ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ এসব অবৈধ ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে কিছু অসাধু বনকর্মকর্তা-কর্মচারী, পরিবেশ অধিদফতরের কিছু ব্যক্তি ও পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে। সাফারি পার্কের বাউন্ডারি দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে সড়ক। এ সড়ক দিয়ে ট্রাকে করে মাটি ও বালু পরিবহন করা হয়। ট্রাকে করে এসব মাটি ও বালু পরিবহনের সময়ও ধুলাবালি জীবজন্তুর বেষ্টনীর ভেতরে গিয়ে পড়ছে। ওই ধুলাবালির কারণে পার্কের দর্শনার্থীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বনবিট কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে থেকে পার্কের পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে বা পার্কের পাশে ইটভাটা স্থাপনে সরকারি কোন ধরণের অনুমোদন দেওয়ার কথা না। এসব ইটভাটার কারণে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য মারাত্বকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে অবগত করেছি।

 
Electronic Paper